আরেক বোমা ছুরলেন মাশরাফি


নার্ভাস নাইন্টিনে প্রাপ্য সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৫ রান
দূরে থাকতে আউট হওয়ার কষ্টটা কুরে কুরেই
খাচ্ছিল।এতটাই যে ড্রেসিংরুম থেকে মাঠের ভেতর
দিয়ে সংবাদ সম্মেলন কক্ষের দিকে হেঁটে আসতে আসতেও মুখ বন্ধ নেই এনামুল হকের।
বিসিবির মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমামের
সঙ্গে আলাপে নিজেকেই শুধু বকে চলছিলেন তিনি,
‘ভাবলাম মারলেই হয়ে যাবে। কিন্তু এমন হল যে..।
আগের ম্যাচেও সেঞ্চুরির সুবাস পাচ্ছিলেন। সেই
ম্যাচে ৮০ রান করে আউট হয়ে গেলেও এবার
সেঞ্চুরির আরো কাছ থেকে ঘুরে এলেন।
৯৫ রানের ইনিংসে যদিও ম্যাচসেরার পুরস্কারের
হাজার ডলারের চেক হাতে উঠেছে। কিন্তু সেটিও
যে তাঁর এক ক্যালেন্ডার ইয়ারে তৃতীয়
ওয়ানডে সেঞ্চুরির আক্ষেপ ঘুচতে ব্যর্থ হবে,
তা তো সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে থেকেই
বোঝা যাচ্ছিল, ‘আক্ষেপ তো আছেই।
সেঞ্চুরিটা মিস করলাম।’ আউট হওয়ার
সময়টা নার্ভাস নাইনটিজ বলেই তাঁর হৃদয়ে বেদনার
রিনিঝিনি সুর বাজছে আরো বেশি, ‘এর
আগে কখনোই নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে আউট হইনি। এ
জন্যই আফসোসটা আরো বেশি হচ্ছে।’
৫-০'র সৌরভ সব দিকেম্যাচসেরার হাতে পুরস্কার
তুলে দিচ্ছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল আলম
বিসিবি পরিচালক নাঈমুর রহমান
এবং বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের প্রধান
উপদেষ্টা মাহবুব মোর্শেদ হাসান রুনু। ছবি : মীর
ফরিদ এর পেছনে নিজের দায়ই
সবচেয়ে বেশি দেখলেন। কারণ আউট তো হয়েছেন
লেগস্পিনার তাফাদজাওয়া কামুঙ্গোজির
বাজে একটা বলে, ‘শর্ট বল ছিল। আমি আশাই
করিনি যে ওই সময়ে এমন একটা বাজে বল পাব।
আশার বিপরীতে বলটা এসেছে।
সে কারণে সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠতে পারিনি।
এখনো বুঝতে পারছি না কী করলাম!’ ঠিক
করেছিলেন ব্যাটিং পাওয়ার প্লে’র
আগে তুলে তুলে মারবেন না। কিন্তু পাওয়ার
প্লে শুরু হতেই পেয়ে গেলেন সেই বাজে বলটা।
তাতেই সেঞ্চুরির স্বপ্ন বিসর্জন গেলেও দলের
সিরিজ জয়ের দিন দেখা গেছে অন্য এনামুলকে। অন্য
তামিম ইকবালকেও কী নয়! তামিম
যতটা আক্রমণাত্মক, এনামুল ততটা নন। কাজেই
তাঁদের আরেকটি সেঞ্চুরি পার্টনারশিপের (১২১
রানের) পথে রানের দিক থেকে তামিম
পেছনে পড়ে থাকবেন, সেটি সচরাচর দেখা যায় না।
কিন্তু কাল বাংলাদেশের সিরিজ জয় নিশ্চিত
করার দিনে সেটিও দেখা গেল।
২০তম ওভারে ৭১ বলে এনামুল যখন
ফিফটিতে পৌঁছে গেছেন, তখন তামিম ৫০ বলে ৩১!
এখানে এনামুলের ব্যাখ্যাটা এ রকম, ‘তামিম
ভাইয়ের পক্ষে প্রতিদিন দুর্দান্ত শুরু
এনে দেওয়া সম্ভব না। উনি যেদিন জ্বলে ওঠেন,
সেদিন অবশ্যই আমার চেয়ে রান বেশি হয়।
তবে কোনো কোনো দিন হয়তো আমি বাজে বল
বেশি পাব। আজ যেমন আমার কাছেই
বেশি এসেছিল, ওনার কাছে নয়।’ শেষ পর্যন্ত
বাজে বলেই আউট হওয়া এনামুলের ব্যাটিংয়ে অবশ্য
স্টাইক রোটেট করতে না পারার খুঁত আছে। যথেষ্ট
সিঙ্গেল নিতে না পারার এ
অক্ষমতা ঝেড়ে ফেলার জন্য নিজেকেই নিজে সময়ও
বেঁধে দিয়েছেন কুষ্টিয়ার এ তরুণ ব্যাটসম্যান,
‘আসলে চেষ্টা তো করছি কিভাবে আরো বড় ইনিংস
খেলা যায়।
কিভাবে আরো সিঙ্গেল বের করা যায়। প্রত্যেক
ব্যাটসম্যানের টুকটাক কিছু সমস্যা থেকেই যায়।
আমিও সেসব নিয়ে কোচের সঙ্গে কাজ করছি। বয়স
তো মাত্র ২২। আশা করি ২৩-এর আগেই ঠিক
হয়ে যাবে।’ সিরিজ জয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত
বাংলাদেশ দলও প্রকাশ্যে হোয়াইটওয়াশ লক্ষ্যের
কথা বলতে পারছিল না। কাল ৩-০ হয়ে যাওয়ার পর
এমনকি এনামুলেরও সে কথা বলতে আর বাধা রইল
না কোনো, ‘হোয়াইটওয়াশ অবশ্যই সম্ভব। এ
সিরিজে আমি আর তামিম ভাই বড় একটা শুরু
দিচ্ছি। বোলিংয়ে মাশরাফি ভাইও
প্রতি ম্যাচে দুর্দান্ত শুরু দিচ্ছেন। সাকিব ভাই ও
সানি ভাইরাও সুন্দর স্পেল করছেন। যদিও
এখানে সন্ধ্যায় বল করা বেশ কঠিন। কুয়াশা থাকে।
সব মিলিয়ে বলতে পারেন, দল হিসেবে বাংলাদেশ
বেশ ভালো করছে।
আমরা যেভাবে পারফর্ম করছি ও বড়
ব্যবধানে জিতছি, তাতে অবশ্যই ৫-০ করা সম্ভব।’
ওয়ানডেতে এ বছর টানা হারতে থাকা দলের
বদলে যাওয়ার নেপথ্যে বিশেষ একজনের
উপস্থিতিকেও কারণ মনে করেন এনামুল, ‘বোঝাই
তো যাচ্ছে, দলের সব কিছু ভালো হচ্ছে। সবাই
পারফর্ম করছে। নিজের ভূমিকা ঠিকমতো পালন
করছে। এর বাইরে সাকিব আল হাসানের
দলে ফেরাও আমার কাছে বড় একটা ব্যাপার
মনে হয়। আমার মতো জুনিয়র খেলোয়াড়দের জন্য
তাঁর উপস্থিতি বড় অনুপ্রেরণা। কারণ যখনই রান
দরকার, উনি রান করবেন। যখন উইকেট দরকার,
উনি উইকেট নেবেন।’
চতুর্থ ওয়ানডে স্কোয়াড
মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), সাকিব আল
হাসান (সহ-অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, এনামুল হক,
মমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদ উল্লাহ, সাব্বির
রহমান, ইমরুল কায়েস, রুবেল হোসেন, জুবায়ের
হোসেন, আবুল হাসান, তাইজুল ইসলাম।

Comments