"বিষ" সম্পর্কে অদ্ভুদ কিছু তথ্য

বিষ। মানুষের জীবনের ইতিহাসের
সাথে জড়িয়ে আছে মৃত্যুর এই
বার্তাবাহক। সক্রেটিসের পান করা হেমলক
থেকে শুরু করে রূপকথার স্নো হোয়াইটের
খাওয়া আপেল- সব কিছুই আমাদের একই
শিক্ষা দেয়, আর তা হলো বিষ মানেই
বিপদ। আমেরিকান মিউজিয়াম অফ
ন্যাচারাল হিস্টোরির একটি সাম্প্রতিক
প্রদর্শনীতে বিষের
ব্যাপারে অজানা এবং অদ্ভুত সব তথ্য
তুলে আনা হয়েছে। “পাওয়ার অফ পয়জন”
নামের এই প্রদর্শনীতে দেখা যায়
একটি কলোম্বিয়ান বন যা ভরপুর বিভিন্ন
প্রাকৃতিক টক্সিন দিয়ে। এর পর বিষের
ইতিহাস এবং বিভিন্ন বিখ্যাত
কল্পকাহিনীর চরিত্রের
মাঝে দিয়ে বিভিন্ন বিষের পেছনের
বিজ্ঞান তুলে আনা হয়। আবার
চিকিৎসাবিদ্যায় ব্যবহৃত কিছু বিষ ভুল
হাতে পড়লে একেবারে মারাত্মক
হয়ে উঠতে পারে- এ ব্যাপারেও তথ্য
দেওয়া হয়।
বিষের ব্যাপারে খুব
বেশী জানি না আমরা। শুধু জানি এর
থেকে দূরে থাকতে হবে। আসুন
জেনে নাওয়া যাক বিষের কিছু চমৎকার
বৈশিষ্ট্য।
Venomous নাকি poisonous?
বাংলায় দুটোকেই “বিষাক্ত” বলা হলেও এ
দুটো এক নয়। বিষ কিভাবে পরিবাহিত
হবে তার উপরে নির্ভর করে কোনও বিষধর
প্রাণী venomous নাকি poisonous।
প্রাণীটি যদি venomous
হয়ে থাকে তবে সে আপনার শরীরে হুল
ফোটাবে, কামড় দেবে অথবা আঁচড়
কাটবে শরীরের ভেতরে বিষ ঢুকিয়ে দেবার
জন্য। প্রাণীটি যদি poisonous হয়
তবে তার শরীরে বিষ নিঃসরণের জন্য
টিস্যু থাকবে কিন্তু অন্য প্রাণীর
শরীরে সেই বিষ ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য
কোনও প্রক্রিয়া অবলম্বন করে না তারা।
সায়ানাইড থাকতে পারে আপনার খাবারে!
ভয়ংকর বিষ হিসেবে পটাশিয়াম
সায়ানাইডের নাম আমাদের সবারই জানা,
তাই না? কিন্তু জানেন কি, আপনার
দৈনন্দিন
খাবারে থাকতে পারে সায়ানাইড অথবা এমন
উপাদান যা থেকে সায়ানাইড
তৈরি হতে পারে? ধান, গম, আখ, কাসাভা,
সয়াবিন ইত্যাদি অনেক খাদ্যেই
রয়েছে এমন সব পদার্থ যা সায়ানাইডের
উৎস। তার মানে অবশ্য এই নয় যে আপনার
পেট থেকে সায়ানাইড বিষ
তৈরি হয়ে আপনি মরে যাবেন!
নিকোটিন খাওয়া আপনার জন্য
ভালো হতে পারে!
নিকোটিন এমন একটা বিষ যা মানুষ খুব শখ
করে পান করে ধোঁয়া হিসেবে।
কি ভেবেছেন, শুধু তামাকের মাঝেই
নিকোটিন আছে? আপনার-আমার খুব
পরিচিত (এবং প্রিয়) কিছু
সবজিতে প্রাকৃতিকভাবে থাকে অল্প
পরিমাণে নিকোটিন। এসব সবজির
মাঝে আছে টমেটো, বেগুন, ফুলকপি মরিচ
ইত্যাদি। এসব থেকে শরীরে যে পরিমাণ
নিকোটিন আসে সেটা ক্ষতিকর নয়
বরং দেখা গেছে পারকিনসনস ডিজিজ এর
সম্ভাবনা কমিয়ে আনতে এটা বেশ
কাজে লাগে।
স্নো হোয়াইটের
কাহিনী সত্যি হতে পারে!
কিছু বিষ আছে যা মানুষের
শরীরকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত
করে দিতে পারে প্রায় এক সপ্তাহ
পর্যন্ত। যেমন পাফারফিশের বিষ। এমন
বিষে ভরা একটা আপেলের
টুকরো স্নো হোয়াইটের পেটে গেলে চার
থেকে বিষ ঘণ্টা পর্যন্ত তার অচেতন
থাকা অস্বাভাবিক কিছু না। তবে এ
সময়ে তাকে ভালোবেসে রাজপুত্র যতই
চুম্বন করুক, বিষের প্রভাব যাওয়ার
কথা না।
কিছু বিষের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ
গড়ে তুলতে পারে আপনার শরীর
বিভিন্ন প্রাণীর
শরীরে তৈরি হওয়া বিষের মূল
ভিত্তি হলো প্রোটিন।
এগুলো হয়ে উঠতে পারে মানুষের মৃত্যুর
কারণ। কিন্তু বিভিন্ন রোগজীবাণুর
টিকা দেবার ফলে যেভাবে মানুষের
শরীরে এই রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ
গড়ে ওঠে, তেমনিভাবেই অল্প মাত্রার বিষ
শরীরে প্রবেশ করালে একটু একটু
করে সে বিষের বিরুদ্ধে শরীরে প্রতিরোধ
গড়ে ওঠে। এই প্রক্রিয়ায় কিছু সাপের
বিষের
প্রতি সহ্যক্ষমতা তৈরি করা সম্ভব।
কিন্তু পারদ বা আর্সেনিকের মতো বিষের
ক্ষেত্রে এটা করা যায় না। এসব বিষ
শরীরের কোষে জমা হয়ে হয়ে মৃত্যু
এগিয়ে আনে।
ম্যাকবেথের বিষ আসলেই বিষাক্ত ছিলো
শেকস্পিয়ারের ম্যাকবেথে রয়েছে এমন এক
বিষের রেসিপি যাতে বিদঘুটে সব নামের
উপাদান যোগ করা হয়। যেমন গিরগিটির চোখ,
কুকুরের জিহ্বা, নেকড়ের দাঁত। কিন্তু
দেখা যায়, সে সময়ে এসব নামের বিষাক্ত
গাছগাছড়া ছিলো। এখন তাদের নাম ভিন্ন
কিন্তু বিষাক্ত গাছ হিসেবে তাদের
পরিচিতি আছে। এইসব গাছ
দিয়ে তৈরি বিষের থেকে যে ভাপ ওঠে,
তা নিশ্বাসের সাথে টেনে নিলেই
তৈরি হতে পারে দৃষ্টিবিভ্রম।
রাসায়নিক অস্ত্রের প্রাচীনত্ব
রাসায়নিক অস্ত্র কি শুধু আধুনিক
প্রযুক্তির উৎপাদন? না। বরং অনেক
প্রাচীন কাল থেকেই এটা মারনাস্ত্র
হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আজ
থেকে ৩,০০০ বছর আগেও তীরন্দাজেরা বিষ
মাখানো তীর ব্যবহার করত।
রোমানরা ছিলো এক কাঠি বাড়া।
তারা মাটির হালকা পাত্রে বিষধর সাপ
রেখে দিত আর প্রতিপক্ষের
দিকে সেটা ছুঁড়ে মারতো। ফলাফল?
অভিনব রাসায়নিক বোমা!
বিষ হতে পারে উপকারী
চিকিৎসার জন্য বেশ কিছু বিষ ব্যবহার
করা হয়। ব্যথা কমাতে, রক্তের
শর্করা এবং রক্তচাপ কমাতে বিষ
কাজে লাগে। এমনকি সর্বপ্রথম
কেমোথেরাপি ওষুধ তৈরি হয়েছিল
একটি বিষাক্ত গাছ থেকে।

Comments