পৃথিবীতে যত খাবার রয়েছে সব খাবারের
পুষ্টিগুণ ও উপাদেয়তার
দিকটি বিবেচনা করে যদি আমরা একটি তালি
তবে সে তালিকার প্রথম সারিতেই
থাকবে ‘মধু’র নাম। মানবদেহের জন্য মধু
অত্যন্ত উপকারী এবং নিয়মিত মধু সেবন
করলে অসংখ্য রোগবালাই হতে পরিত্রান
পাওয়া যায়। এটি বৈজ্ঞানিকভাবেই
প্রমানিত। হাজার বছর পূর্বেও মধু ছিল সমান
জনপ্রিয়। ইতিহাস
পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অনেক সভ্যতায়
মধু ‘ঔষধ’ হিসেবেও ব্যবহৃত হত।
এমনকি প্রতিটি পবিত্র ধর্মগ্রন্থেও মধু
সেবনের উপকারিতা এবং কার্যকারিতার
কথা উল্লেখ রয়েছে। যেমন পবিত্র আল
কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, "আপনার
পালনকর্তা মৌমাছিকে আদেশ
দিলেনঃ পর্বতে, গাছে ও উঁচু
চালে বাড়ি তৈরী কর, এরপর সর্ব প্রকার ফুল
থেকে খাও এবং আপন পালনকর্তার উন্মুক্ত
পথে চলো। তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙের
পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্য
রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চই
এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন
রয়েছে। (সূরা নাহলের ৬৮ ও ৬৯ নম্বর আয়াত)"
মধু কি?
মধু হচ্ছে একটি তরল আঠালো মিষ্টি জাতীয়
পদার্থ, যা মৌমাছিরা ফুল থেকে নেকটার
বা পুষ্পরস হিসেবে সংগ্রহ
করে মৌচাকে জমা রাখে।
পরবর্তীতে জমাকৃত পুষ্পরস প্রাকৃতিক নিয়মেই
মৌমাছি বিশেষ প্রক্রিয়ায় পূর্ণাঙ্গ
মধুতে রূপান্তর এবং কোষ বদ্ধ অবস্থায়
মৌচাকে সংরক্ষণ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য
সংস্থা এবং খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে মধু
হচ্ছে এমন একটি অগাজানোশীল
মিষ্টি জাতীয় পদার্থ যা মৌমাছিরা ফুলের
নেকটার অথবা জীবন্ত গাছপালার নির্গত রস
থেকে সংগ্রহ করে মধুতে রূপান্তর
করে এবং সুনির্দিষ্ট কিছু উপাদান যোগ
করে মৌচাকে সংরক্ষণ করে।
মধুর উপাদান-
মধুতে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান থাকে। ফুলের
পরাগের মধুতে থাকে ২৫ থেকে ৩৭ শতাংশ
গ্লুকোজ, ৩৪ থেকে ৪৩ শতাংশ ফ্রুক্টোজ, ০.৫
থেকে ৩.০ শতাংশ সুক্রোজ এবং ৫-১২
শতাংশ মন্টোজ। আরো থাকে ২২ শতাংশ
অ্যামাইনো এসিড, ২৮ শতাংশ খনিজ লবণ
এবং ১১ ভাগ এনকাইম। এতে চর্বি ও প্রোটিন
নেই। ১০০ গ্রাম মধুতে থাকে ২৮৮ ক্যালরি।
মধুর উপকারিতাঃ
মধুর উপকারিতার কথা লিখে শেষ
করা যাবে না।মধুর নানাবিধ
উপকারিতা নিম্নে প্রদত্ত হল,
শক্তি প্রদায়ীঃ মধু
ভালো শক্তি প্রদায়ী খাদ্য। মধু তাপ ও
শক্তির ভালো উৎস। মধু দেহে তাপ ও
শক্তি জুগিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে।
হজমে সহায়তাঃ এতে যে শর্করা থাকে তা সহ
হজম হয়। কারণ এতে যে ডেক্সট্রিন
থাকে তা সরাসরি রক্তে প্রবেশ
করে এবং তাৎক্ষণিক ভাবে ক্রিয়া করে।
পেটরোগা মানুষদের জন্য মধু বিশেষ উপকারি।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর
করেঃ মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স,
ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ১ চা চামচ
খাঁটি মধু ভোরবেলা পান
করলে কোষ্ঠবদ্ধতা এবং অম্লত্ব দূর হয়।
রক্তশূন্যতায়ঃ মধু রক্তের হিমোগ্লোবিন
গঠনে সহায়তা করে বলে এটি রক্তশূন্যতায়
বেশ ফলদায়ক।কারণ এতে থাকে খুব
বেশি পরিমাণে কপার, লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ।
ফুসফুসের যাবতীয় রোগ ও শ্বাসকষ্ট
নিরাময়েঃ বলা হয়, ফুসফুসের যাবতীয়
রোগে মধু উপকারী। যদি একজন
অ্যাজমা (শ্বাস কষ্ট) রোগীর নাকের
কাছে ধরে শ্বাস টেনে নেয়া হয়
তাহলে সে স্বাভাবিক এবং গভীর
ভাবে শ্বাস টেনে নিতে পারবেন। কেউ কেউ
মনে করেন, এক বছরের পুরনো মধু শ্বাস কষ্টের
রোগীদের জন্য বেশ ভালো।
অনিদ্রায়ঃ মধু অনিদ্রার ভালো ওষুধ।
রাতে শোয়ার আগে এক গ্লাস পানির
সঙ্গে দুই চা চামচ মধু
মিশিয়ে খেলে এটি গভীর ঘুম ও সম্মোহনের
কাজ করে।
পাকস্থলীর সুস্থতায়ঃ মধু পাকস্থলীর
কাজকে জোরালো করে এবং হজমের গোলমাল
দূর করে। এর ব্যবহার হাইড্রোক্রলিক এসিড
ক্ষরণ কমিয়ে দেয় বলে অরুচি, বমিভাব, বুক
জ্বালা এগুলো দূর করা সম্ভব হয়।
দেহে তাপ উৎপাদনেঃ শীতের ঠান্ডায়
এটি দেহকে গরম রাখে। এক অথবা দুই চা চামচ
মধু এক কাপ ফুটানো পানির
সঙ্গে খেলে শরীর ঝরঝরে ও তাজা থাকে।
পানিশূন্যতায়ঃ ডায়রিয়া হলে এক লিটার
পানিতে ৫০ মিলিলিটার মধু
মিশিয়ে খেলে দেহে পানিশূন্যতা রোধ
করা যায়।
দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেঃ চোখের জন্য ভালো।
গাজরের রসের সাথে মধু
মিশিয়ে খেলে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে।
রূপচর্চায়ঃ মেয়েদের রূপচর্চার ক্ষেত্রে মাস্ক
হিসেবে মধুর ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। মুখের
ত্বকের মসৃণতা বৃদ্ধির জন্যও মধু ব্যবহৃত হয়।
ওজন কমাতেঃ মধুতে নেই কোনো চর্বি। মধু
পেট পরিষ্কার করে, মধু ফ্যাট কমায়, ফলে ওজন
কমে।
Comments
Post a Comment