নদী বা সমুদ্রের পানি থেকে ভেসে থাকা তেল অপসারণের জন্য নতুন এক যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের
বিজ্ঞানী মো. ফারুক বিন হোসেন ইয়ামিন৷
ডয়চে ভেলেকে তিনি জানান,
প্রাথমিকভাবে এই পরীক্ষা সফল হয়েছে৷
সুন্দরবনের শেলা নদীতে তেল ট্যাংকার
ডুবে যাওয়ার পর তেল ছড়িয়ে পড়ে নদীতে,
যা অপসারণে স্থানীয়
মানুষকে কাজে লাগানো হয়৷ নারী ও শিশুসহ
সবাই খালি হাতে সেই তেল তোলার কাজ
করেন৷ এটা আহত করে বাংলাদেশ
কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী মো.
ফারুক বিন হোসেন ইয়ামিনকে৷ তিনি চরম
স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে সাধারণ মানুষের এই তেল
তোলার কাজকে কম
খরচে যান্ত্রিকভাবে করার
কথা ভাবতে থাকেন৷
আর সেই ভাবনা থেকেই দেশীয়
পদ্ধতিতে তৈরি করে ফেলেন তেল
অপসারণের যন্ত্র৷ প্রাথমিকভাবে তিনি ছোট
আকারে ‘কর্কসিট'
দিয়ে যন্ত্রটি তৈরি করে সফল হলেও, এটি বড়
আকারেও করা সম্ভব৷
মো. ফারুক বিন হোসেন ইয়ামিন
ডয়চে ভেলেকে জানান, যন্ত্রটির দুটি অংশ
– তেল শোষক এবং পাম্প৷ নির্দিষ্ট স্তরের
তেল শোষন ক্ষমতা সম্পন্ন শোষক
অংশটি দুটি স্তর বিশিষ্ট মুখের
মতো কাঠামো, যা তেলের নির্দিষ্ট
স্তরকে শোষন করে ভেতরের দিকে প্রবাহিত
করে৷ সেই প্রবাহিত তেল পাম্পের
মাধ্যমে শোষিত হয়ে সংগ্রাহক
আধারে জমা হয়৷ অর্থাৎ সংগ্রাহক
পাত্রে তেল এবং কিছু পরিমাণ
পানি জমা হয়৷ কিন্তু আধারটির নীচের
দিকের নিষ্কাশন ভাল্ব খুলে দিয়ে পানির
স্তরটি অপসারণ করলে ঐ সংগ্রাহক
পাত্রে শুধু তেলই জমা হবে,
যা কিনা পরবর্তীতে ড্রামে ভরে ব্যবহারের
জন্য অপসারণ করা যাবে৷
তিনি বলেন, বড় আকারে স্টিল
দিয়ে তৈরি করা হলে শোষক যন্ত্রটির
প্রতিটি ইউনিট দৈর্ঘ্যে ২০ ফুট হবে৷
এছাড়া তেলের স্তরের ওপর নির্ভর করে এর
প্রস্থ হ্রাস বা বৃদ্ধি করার ব্যবস্থা থাকবে,
যাতে শোষক অংশটির মুখ তেলের স্তরের
গভীরতা অনুযায়ী পানির ওপরে স্থাপন
করা যায়৷
মো. ফারুক জানান, ২০ ফুটের একটি যন্ত্রের
জন্য আট থেকে দশ অশ্ব ক্ষমতা সম্পন্ন
ডিজেল পাম্প ব্যবহার করতে হবে,
যা প্রতি ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার লিটার
তেল উত্তোলন করতে সক্ষম৷ এই
ক্ষমতা পাম্পের অশ্ব ক্ষমতার উপর
নির্ভরশীল৷ এর অর্থ, কতটি ইউনিট ব্যবহার
করা প্রয়োজন সেটা নদীর প্রস্থ এবং তেলের
পরিমাণের উপর নির্ভর করবে৷ তাঁর কথায়,
দেশীয় উপাদানে একটি শোষক ইউনিট
তৈরি করতে দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা ব্যয়
হবে৷
প্রাথমিকভাবে ‘কর্কসিট'
দিয়ে তৈরি যন্ত্রটির
কার্যকারিতা দেখা হয়েছে বাংলাদেশ
কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পুকুরে মঙ্গলবার৷
এবং এই পরীক্ষা সফল
হয়েছে বলে জানিয়েছেন মো. ফারুক বিন
হোসেন ইয়ামিন৷
তিনি জানান, দুর্ঘটনা ঘটার পর অতি দ্রুততার
সাথে নদীতে আড়াআড়িভাবে রাবার টিউব
অথবা রাবার ডেম দিয়ে তেল
ছড়িয়ে পড়া এলাকা আবদ্ধ করে দিতে হবে৷
এতে নীচ দিয়ে পানি চলে যাবে, কিন্তু
তেলের স্তরটি টিউব বেষ্টিত এলাকায় আবদ্ধ
থাকবে৷
পরবর্তীতে এ যন্ত্রটি ব্যবহার করে ৮০
থেকে ৯০ ভাগ তেল অপসারণ করা সম্ভব৷
মো. ফারুক বলেন, যন্ত্রটি ৭০ ভাগ তেল
এবং ৩০ ভাগ পানি শোষন করে৷ পরে তেল
এবং পানি আলাদা করে ঐ তেল ব্যবহারের
উপযোগীও করা যাবে৷
ইয়ামিন বলেন, ‘‘আমি এই যন্ত্রটি দেশের
কাজে লাগাতে চাই৷ দুর্যোগ
ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় বা সরকারের
কোনো কর্তৃপক্ষ এগিয়ে এলে আমি বড়
আকারের এই শোষক যন্ত্র তৈরি করব৷''
এছাড়া বাণিজ্যিকভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান
এগিয়ে এলেও তাঁর কোনো আপত্তি নেই
বলে জানান মো. ফারুক বিন হোসেন
ইয়ামিন৷-ডিডব্লিউডিই।
Comments
Post a Comment