আসামে জঙ্গীদের আতঙ্কে ঘর ছেড়েছে লক্ষাধিক মানুষ

উত্তরপূর্ব ভারতের আসামে গত সপ্তাহে আদিবাসীদের ওপরে যে হামলা চালায় সন্দেহভাজন বোড়ো জঙ্গীরা, তার পরের দিন থেকেই বিভিন্ন বোড়ো গ্রামও পাল্টা হামলার
শিকার হয়। আদিবাসীদের চালানো এইসব
হামলাগুলিতে আসামে প্রায় ৫০টির
মতো গ্রামে বাড়ী ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, মারা গেছেন ১৬ জন বোড়ো জাতির মানুষ।
হাজার হাজার বোড়ো গ্রাম ছেড়ে আশ্রয়
শিবিরগুলিতে চলে যাচ্ছেন।
এই সহিংসতায় এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে মোট
৮৩ জন আদিবাসী আর বোড়ো মানুষ,
গোটা আসামে আতঙ্কে ঘর ছেড়েছেন এক
লক্ষেরও বেশী লোক।
আদিবাসী মানুষদের ওপরে সন্দেহভাজন
বোরো জঙ্গীদের আক্রমনের পরের দিন
থেকেই আদিবাসীদের একাংশ
পাল্টা হামলা চালান বোড়ো গ্রামগুলিতে।
এরকমই একটি গ্রাম – কোকরাঝাড় জেলার
ডিমাপুর যেখানে একসঙ্গে তিনজন মানুষ
মারা গিয়েছিলেন বুধবার। নিহতদের
মধ্যে আছেন মনিশঙ্কর বসুমাতারি। তাঁর
মেয়ে নিসম নিয়ে যাচ্ছিলেন জঙ্গলের
ভেতরে সেই জায়গায় যেখানে তাঁর বাবার
নিথর দেহটা পড়ে ছিল।
নিসম বসুমাতারির কথায়, সকাল থেকেই
নিজেদের
গ্রামগুলোতে আদিবাসীরা জটলা করছিল।
মিজ. বসুমাতারির মা আর বাবা গরু-
ছাগলগুলোকে ঘরে নিয়ে আসতে গিয়েছিলেন
– সেই সময়েই আক্রমণ করে।
বাবা ভয়ে পালাতে জঙ্গলের দিকে চলে যান
– উল্টোদিক থেকে কয়েকজন আদিবাসী তীর
ছোঁড়ে। পেটে তীর লেগেছিল। ঘটনাস্থলেই
মারা যান নিসম বসুমাতারির
বাবা মনিশঙ্কর।
এখনও সেখানে পড়ে রয়েছে কয়েকটা তীর আর
মি. বসুমাতারির চটি।
ডিমাপুর গ্রাম থেকে আরও কিছুটা পরে গ্রাম
মাইনোপুর। গ্রামে ঢুকতেই নাকে পোড়া গন্ধ
আসছিল। দেখা যাচ্ছিল ভাঙ্গা বাড়ি –
ধানের গোলাগুলো থেকে এখনও ধোঁয়া উঠছে।
ফুলমতী মুসাহারি সেই বুধবারের পরে আজই
প্রথম নিজের পুড়ে যাওয়া বাড়ীতে ফিরলেন
আমাদের সঙ্গে।
মিসেস
মুসাহারি বলছিলেন,আদিবাসীরা যখন
আক্রমণ করল, তখন গ্রামের সবার
সঙ্গে তিনিও পালাচ্ছিলেন
সাইকেলে চেপে। তখনই তাঁর দিকে একটা তীর
ছুটে আসে। তবে সেটা গায়ে লাগে নি।
কিন্তু তিনি সাইকেল থেকে পড়ে যান। আর
ছুটতে থাকেন। তারপরেই তাঁর বাড়ী আর
আশপাশের আরও কিছু বাড়ী, ধানের
গোলা জ্বালিয়ে দেয়।
আতঙ্কে যেমন ঘর ছেড়ে পালিয়েছেন
আদিবাসী মানুষরা, তেমনই প্রতি আক্রমণ শুরু
হওয়ার পরে ভয়ে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয়
নিয়েছেন অনেক বোড়ো জাতির মানুষও।
সোনাপুর নামের
একটি গ্রামে কাছাকাছি তিনটি গ্রামের
মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
এই শিবিরেই দেখা হয়েছিল মি. মন্ডল
ওয়ারির সঙ্গে।
মি. মন্ডল ওয়ারি বলছিলেন প্রায় ছশো মানুষ
এখন শিবিরে রয়েছেন। আজকেই ত্রিপল
পাওয়া গেছে – তাই পাশের বাঁশঝাড়
থেকে বাঁশ কেটে নিয়ে এসে তাঁবু
বানানো চলছে। রান্নাও হচ্ছে পাশেই।
তিনি বলেন সরকারের কাছ থেকে খুব
একটা ত্রাণ সামগ্রী আসে নি। আর
এদিকে বেশীরভাগেরই ধান
পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই
যা পাওয়া যাচ্ছে, তাই রান্না হচ্ছে।
বাচ্চাগুলোর জন্য
আলাদা ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না।
প্রথমে জঙ্গীদের আক্রমণ,
তারপরে আদিবাসীদের প্রতি আক্রমন।
আসামের এই কোকরাঝাড়, শোনিতপুর
বা চিরাং, উদালগুড়ি - এই জেলাগুলিতে গত
দুদিনে অবশ্য নতুন কোনও সহিংসতা ঘটে নি।
পুলিশ আর সেনা টহল বেড়েছে।
কিন্তু মানুষের মন থেকে ভয় এখনও যায় নি।
যদিও দুই জাতির নেতারা শান্তির
বার্তা দিচ্ছেন বারে বারে।
সুত্রঃ বিবিসি।

Comments