এই পাথরটি আসল হীরা, নাকি নকল? হীরার
ক্ষেত্রে সবচেয়ে সাধারণ প্রশ্ন এটি। আর
তা জানতে হলে একজন গেমোলজিস্টের
কাছে যেতে হবে আপনাকে। একমাত্রা তারাই এ
বিষয়ের এক্সপার্ট।এখানে টুয়েন্টিথ
সেঞ্চুরি ডেকোরেটিভ আর্টস এক্সপার্ট
এবং গেমোলজিস্ট রেনি হির্চ আপনাদের
শিখিয়েছেন, কিভাবে আসল হীরা চেনা যায়।
চেনার উপায় : অনেকেই হীরার গয়না কেনেন।
সব সময় ব্র্যান্ডের দোকান থেকে তো আর
কেনা হয় না। অনেকেই বিদেশ
থেকে আনিয়ে নেন বা অন্য কারো কাছ
থেকে কেনেন। তখন আসল হীরা চেনাটার
শিক্ষাটা না থাকলেই নয়। যদি চিনতে পারেন,
তবে এত টাকা আর জলে যাবে না।
১. লোপের ভেতর দিয়ে দেখুন : বিশেষ এক ধরনের
ম্যাগনিফায়িং গ্লাস হলো লোপ।
এটি দিয়ে হীরা বা অন্যান্য পাথর
পরীক্ষা করে নিতে হয়। লোপের মাধ্যমে যখন
কয়েকটি হীরা দেখবেন, তখন কয়েক ধরনের
চেহারা দেখতে পারেন। কিছু পাবেন
যেগুলো মোটেও নিখুঁতভাবে মসৃণ করা নয়।
এগুলো দেখলে মনে হবে যে, একেবারে প্রাকৃতিক
অবস্থায় রাখা হয়েছে। এগুলোই আসল হীরা।
কিন্তু ভুয়া হীরা একেবারে নিখুঁত ও মসৃণ হবে।
দ্বিতীয়ত, সূক্ষ্মভাবে হীরার ধারগুলো দেখুন।
লোপের মাধ্যমে যখন দেখবেন, তখন এর
ধারগুলো বেশ ধারালো বলেই মনে হবে। কিন্তু
ভুয়া হীরার ধারগুলো গোলাকার
বা মসৃণভাবে বানানো হয়।
যদি এমন হয় যে একটি গয়নায় স্বর্ণ ও
রূপা দিয়ে হীরাটাকে আকটে দেওয়া হয়েছে,
তবে কিছুটা সন্দেহের অবকাশ আছে।
একটি হীরাকে কেন এই সস্তা মেটাল
দিয়ে বাঁধা হবে, তা একটি সন্দেহের বিষয়।
২. শিরিষ কাজগ দিয়ে ঘষা : এটা খুব সহজ
একটি পদ্ধতি। হীরা বিশ্বের সবচেয়ে শক্ত বস্তু।
কোন কিছু দিয়েই একে ঘষে মসৃণ করা যাবে না।
কিন্তু যদি কৃত্রিম হীরা হয় তাহলে এতে শিরিষ
কাগজ দিয়ে ঘষলেই তাতে দাগ পড়বে।
৩. নিঃশ্বাসের পরীক্ষা : পাথরটিতে মুখের
গরম বাতাস দিন। হীরাটি কুয়াশাচ্ছন্ন
হয়ে পড়েছে। বাথরুমের আয়নায় নাক-মুখের
নিঃশ্বাস
ফেললে এভাবে আয়নাটি ঝাপসা হয়ে যাবে।
হীরাটি যদি ভুয়া হয়, তবে খুব দ্রুত
ঝাপসা ভাবটি চলে যাবে। কিন্তু আসল হীরা খুব
দ্রুত পরিষ্কার হবে না। কারণ আসল হীরা তাপ
ধরে রাখে না যে বাষ্প খুব দ্রুত উবে যাবে।
৪. আলোর প্রতিফলন দেখা : আসল
হীরা যেভাবে আলোর প্রতিফলন ঘটায়
তা সত্যিই দারুণ। হীরাতে আলো ফেললে এর
ভেতরে ধূসর ও ছাই রংয়ের আলোক
ছটা দেখা যাবে যাকে বলা হয় 'ব্রিলিয়ান্স'।
আর বাইরের দিকে প্রতিফলিত হবে রংধনুর
রং যাকে বলা হয় 'ফায়ার'। কিন্তু নকল হীরার
ভেতরে রংধনুর রং দেখতে পাওয়া যাবে।
মানুষের একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে,
হীরা রংধনুর রং প্রতিফলিত করে। কিন্তু
হীরা প্রতিফলনে বেশিরভাগ ধূসর ভাব থাকে।
৫. এর প্রতিসরণের বৈশিষ্ট্য : হীরার
এতো চকমকে হওয়ার কারণ হলো, এর প্রতিসরণের
বৈশিষ্ট্য। এই পাথরটি যে পরিমাণ
আলো ধরে রাখতে পারে, তা কাঁচ, কোয়ার্টজ
বা ত্রিকোণাকৃতি জিরকোনিয়ামও
করতে পারে না। একটি আসল
হীরা যদি পত্রিকার ওপর রাখেন, তবে এর
ভেতরে পত্রিকার কালো রংয়ের লিখার
কোনো প্রতিসরণ ঘটবে না। কিন্তু ভুয়া হীরার
মধ্যে কালো লিখার কোনো অক্ষর পর্যন্ত
দেখা যেতে পারে।
গেমোলজিস্ট দ্বারা পরীক্ষা করানো : ওপরের
পদ্ধতিগুলো বাড়িতে প্রয়োগ করতে পারেন।
তবে একজন পাথর এক্সপার্টের কাছেও
নিয়ে যেতে পারেন একে। পেশাদার
গেমোলজিস্ট রয়েছেন
যারা হীরা পরীক্ষা করে দেন। বিশেষ
উপলক্ষে বেশ দিয়ে হীরা কিনলে তা এক্সপার্ট
দ্বারা পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারেন। এই পাথর
বিশেষজ্ঞ আরো নানা বৈজ্ঞানিক
উপায়ে আপনাকে নিশ্চিত করতে পারবেন। একজন
গেমোলজিস্ট আসল হীরার গুণগত মানও বের
করে তার মূল্যমান নিশ্চিত করতে পারবেন।
আপনি যাকে হীরা ভাবছেন তা যদি নকল হয়,
তবে হীরার মতোই
দেখতে যে পাথরগুলো হতে পারে তা হলো-
হোয়াইট টোপাজ, হোয়াইট স্যাফায়ার, কিউবিক
জিরকোনিয়াম, মইসানাইট বা ল্যাব গ্রোন
হতে পারে।
Comments
Post a Comment