আপনি কি প্রায়ই জিনিসপত্র রেখে ভুলে যান
কোথায় রেখেছিলেন, বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়, তারিখ ইত্যাদি হরহামেশাই
ভুলে যাওয়ার অভ্যাস রয়েছে?
তাহলে জেনে রাখুন এর
পেছনে আছে আপনারই ভুল। আমাদের মস্তিষ্ক
হলো সকল কিছুর চালিকাশক্তির উৎস।
মস্তিষ্কের ইশারা বাদে আমরা আমাদের
একটি আঙুল নড়াতে পর্যন্ত পারি না।
ক্লিনিক্যাল রিসার্চার এবং ‘পাওয়ার ফুডস
ফর ব্রেইন’ এর লেখক নীল বারনার্ড বলেন,
‘আমাদের মস্তিষ্কের সার্কিটগুলো খুবই
নমনীয় যা খুব সহজেই ক্ষতিগ্রস্থ হয় ঘুমের
সমস্যা, ঔষধের
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং পরিমিত পুষ্টিকর
খাদ্যের অভাবে’। তাই মস্তিষ্কের
সমস্যা এবং ভুলে যাওয়া রোগের সমাধান
কিন্তু আমাদের নিজেদের হাতেই রয়েছে।
দরকার শুধু একটু সচেতনতা ও সতর্কতার। কিছু
খাবার রয়েছে যা আমাদের মস্তিষ্কের
কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে বিশেষ
ভাবে কার্যকরী। বারনার্ড এই
খাবারগুলোকে সুপার ফুড হিসেবে আখ্যায়িত
করেছেন কারণ এগুলো একই সাথে আমাদের
মস্তিষ্ক ও হৃদপিণ্ডের জন্য শ্রেষ্ঠ খাবার।
১) আঙুর
ইউনিভার্সিটি অফ সিনসিনাটি এর
একটি গবেষণায় দেখা যায় নিয়মিত আঙুরের
জুস পান করার ফলে যাদের সামান্য
বুদ্ধি বিকাশে সমস্যা ছিল
তা ধীরে ধীরে উন্নত হয়েছে এবং সেই
সাথে স্মৃতিশক্তিতে বেশ উন্নতি সাধন
হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে মাত্র ৩ বার পরিমিত
পরিমাণে আঙুর খাওয়া আমাদের মস্তিষ্কের
কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত কার্যকর।
তবে যদি আঙুরের জুস পান করতে হয় তবে এর
সাথে কোনো ধরণের চিনি বা সুগার
এলিমেন্ট না মেশানোই ভালো।
২) মিষ্টি আলু
বারনার্ড তার বইয়ে উল্লেখ করেন
‘ওকিনাওআনস যিনি কিনা বিশ্বের
দীর্ঘজীবী ব্যক্তি ছিলেন এবং যার মানসিক
দক্ষতা বুড়ো বয়সেও ছিল বেশ সচল তার
অন্যতম প্রধান খাবারের মধ্যে ছিল
মিষ্টি আলু’। মিষ্টি আলুর বেটা ক্যারোটিন
বেশ শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
যা মস্তিষ্ককে রক্ষা করে। বারনার্ড বলেন,
‘মাঝারি আকারের একটি মিষ্টি আলু ১০০
ক্যালরি এবং প্রায় ১৪ মিলিগ্রাম
বেটা ক্যারোটিনে ভরপুর থাকে যার দ্বিগুণ
পরিমাণে বেটা ক্যারোটিন আমাদের
মস্তিষ্কের জন্য জরুরী প্রতিদিন’।
৩) কোকোয়া পাউডার
১ কাপ গরম কোকোয়া আমাদের মস্তিষ্কের
কর্মদক্ষতা এবং মস্তিষ্ক তীক্ষ্ণ
রাখতে বিশেষভাবে সহায়তা করে।
কোকোয়া পাউডারে থাকে ফ্লেভানলস
মানস্ক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তা মস্তিষ্কের
রক্ত সঞ্চালনকারী শিরা উপশিরা নমনীয়
রাখে এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। এই
দুটো কাজই মস্তিষ্কের জন্য অত্যন্ত ভালো।
৪) ব্লু বেরি, স্ট্রবেরি
বেরি প্রজাতির ফলগুলোতে রয়েছে প্রচুর
পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য
উপাদান যা ইনফ্লেমেশনের বিরুদ্ধে কাজ
করে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যারা ব্লু
বেরি জাতীয় ফল বেশি খেয়ে থাকেন তাদের
কোনো জিনিস মনে করার এবং দ্রুত শেখার
ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
৫) কাঠবাদাম
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শিল্ডের অন্যতম প্রধান
জিনিস হচ্ছে ভিটামিন ই
যা কাঠবাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে।
প্রায় ৫৪০০ মানুষ যাদের বয়স ৫৫ ও ৫৫
হতে বেশি তাদের ওপর প্রায় ১০ বছর
গবেষণা চালিয়ে দেখা যায় যারা ভিটামিন
ই বেশি পরিমাণে খেয়েছেন তাদের
আলঝেইমার্স রোগ এবং স্মৃতিভ্রষ্টের
সমস্যা ঝুঁকি ২৫% কম। তাই প্রতিদিন
ছোটো একমুঠো কাঠবাদাম যার
প্রতি আউন্সে রয়েছে প্রায় ৭.৩ মিলিগ্রাম
ভিটামিন খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত।
৬) স্যামন
আমাদের মস্তিষ্কের প্রায় ৬০% এর
বেশি ফ্যাট রয়েছে যার বেশীরভাগ অংশ
ওমেগা৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের তৈরি যার নাম
ডিএইচএ (DHA)। স্যামনে রয়েছে প্রচুর
পরিমাণে ওমেগা৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
যা চিন্তা করার ক্ষমতা এবং বিশ্লেষণের
ক্ষমতা বাড়ায়। সেই সাথে এর বেশ
ভালো প্রভাব রয়েছে স্মৃতিশক্তির উপর।
৭) স্পিনাচ
সবুজ পাতার শাক স্পিনাচে রয়েছে ফোলেট
যা চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়ায়,
স্মৃতিশক্তি উন্নত করে। তাই
প্রতি বেলা স্পিনাচ স্যুপ পান করার
ব্যাপারে জোড় দেন ‘পাওয়ার ফুডস ফর
ব্রেইন’ এর লেখক নীল বারনার্ড।
Comments
Post a Comment