বিশ্বের শীর্ষ ৬ সেনাবাহিনী

দেশের অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত শত্রু থেকে নিজ
সার্বভৌমত্ব রক্ষা করাই মুলত সেনাবাহিনীর
কর্তব্য। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই
রয়েছে নিজস্ব সেনাবাহিনী। এই
সেনাবাহিনীর অধিকাংশ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ,
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, কোরীয় যুদ্ধ,
এমনকি গৃহযুদ্ধে জড়িত ছিল। উপরন্তু এই সামরিক
বাহিনী নিজ দেশের স্বাধীনতা-
সার্বভৌমত্বের জন্য যুদ্ধে সরাসরি জড়িত ছিল।
এদের মধ্যে কোনোটা পালন
করেছে দায়িত্বশীলের ভূমিকা, আবার
কোনোটা হয়েছে নিন্দিত। সেনা সদস্যদের
সংখ্যার ভিত্তিতে বিশ্বের শীর্ষ ১০
সেনাবাহিনী:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র:
বিশ্বের মোট সামরিক ব্যয়ের ৩৯ শতাংশ খরচ
করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গোটা বিশ্ব খরচ
করে ১,৭৫৩ বিলিয়ন ডলার। আর যুক্তরাষ্ট্র খরচ
করে ৬৮২ বিলিয়ন ডলার। মার্কিন
প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দফতর 'পেন্টাগন.
বিশ্বের সবচেয়ে বড় অফিস ভবন। আটলান্টিক
মহাসাগর তীরের উত্তর আমেরিকার
১৩টি ব্রিটিশ উপনিবেশ নিয়ে গঠিত হয়েছিল
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই এই
উপনিবেশগুলোর একটি স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে এই
বিদ্রোহী রাজ্যগুলো গ্রেট ব্রিটেনকে পরাস্ত
করে। এই যুদ্ধ ছিল ঔপনিবেশিকতার
ইতিহাসে প্রথম সফল স্বাধীনতা যুদ্ধ। ঊনবিংশ
শতাব্দীতে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, স্পেন, যুক্তরাজ্য,
মেঙ্েিকা ও রাশিয়া থেকে জমি অধিগ্রহণ
করে এবং টেঙ্াস প্রজাতন্ত্র ও হাওয়াই
প্রজাতন্ত্র অধিকার করে নেয়। ১৮৭০-এর দশকেই
মার্কিন অর্থনীতি বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির
শিরোপা পায়। স্প্যানিশ-আমেরিকান যুদ্ধ ও
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সামরিক শক্তি হিসেবে মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিষ্ঠা দান করে। দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধের সময় এই দেশ প্রথম পরমাণু শক্তিধর
রাষ্ট্র হিসেবে আত্দপ্রকাশ
করে এবং জাতিসংঘ
নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যপদ লাভ করে।
শীতল যুদ্ধের শেষভাগে এবং সোভিয়েত
ইউনিয়নের পতনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
বিশ্বের একমাত্র মহাশক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত
হয়। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের
অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও
সাংস্কৃতিক শক্তিধর রাষ্ট্র। সেনা, নৌ, মেরিন
কর্পস, বিমান আর কোস্ট গার্ড
নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী গঠিত।
মার্কিন সামরিক বাহিনী গঠিত হয় ১৭৭৫ সালে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিয়মিত সেনা সদস্য ১৪,২৯,৯৯৫ জন।
রিজার্ভ আর্মি ৮,৫০,৮৮০ জন। আধা সামরিক
বাহিনীতে রয়েছে ১১,০৩৫ জন সদস্য।
রাশিয়া:
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর তৎকালীন
রাশিয়া ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট বরিস
ইয়েলৎসিন ১৯৯২ সালে ৭ মে সোভিয়েত আর্ম
ফোর্সের সদস্য ও সরঞ্জাম
নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন রাশিয়ান সামরিক
বাহিনী। আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব, উভয় বিশ্বযুদ্ধ
এবং শীতল যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত ছিল এই সামরিক
বাহিনী। সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের
আগে এটি ছিল বিশ্বের অত্যন্ত
শক্তিশালী সামরিক বাহিনী। যা সেই সময়
সৈন্য এবং পারমাণবিক অস্ত্র সংখ্যার দিক
থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এগিয়ে ছিল।
রাশিয়ার সামরিক বাজেট ৯০ দশমিক সাত
বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা বিশ্বের মোট
সামরিক বাজেটের পাঁচ দশমিক দুই শতাংশ।
স্থল বাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী,
স্ট্র্যাজিক রকেট ফোর্স, বিশেষ
বাহিনী এবং এয়ারবোম ট্রুপস
নিয়ে রাশিয়া ফেডারেশনের সামরিক
বাহিনী গঠিত। নিয়মিত সেনা সদস্য ১০,৪০,০০০,
রিজার্ভ আর্মি ২০,৩৫,০০০ এবং আধা-সামরিক
বাহিনীতে রয়েছে ৪,৪৯,০০০ জন সদস্য। রাশিয়ার
রয়েছে ২২,৭১০টি সাঁজোয়াা ট্যাংক,
একটি বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ, ১৫টি উভচর
যুদ্ধজাহাজ, পাঁচটি ক্রুজার, ১৪টি ডেস্ট্রয়ার
যুদ্ধজাহাজ, পাঁচটি ফ্রিগেট, ৭০টি করভিট
যুদ্ধজাহাজ, ৩৩টি নিউক্লিয়ার সাবমেরিন,
১৭টি সাবমেরিন, ১,২৬৪টি যুদ্ধবিমান,
১৯৫টি বোমারু বিমান, ১,২৬৭টি জঙ্গিবিমান,
১,৬৫৫টি সাঁজোয়া হেলিকপ্টার এবং ১২ হাজার
পরমাণু অস্ত্র। রাশিয়া বিশ্বের অনেক
দেশে অস্ত্র রপ্তানি করে থাকে। দুনিয়ার
সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত এবং জনপ্রিয় অটোমেটিক
রাইফেল একে-৪৭-এর নির্মাতা ও ডিজাইনার
রাশিয়ার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিখাইল
কালাশনিকভ। এ পর্যন্ত প্রায় ১০ কোটিরও অধিক
এই অস্ত্র বিক্রি হয়েছে এবং বিশ্বের প্রায়
৫০টিরও বেশি দেশের সামরিক
বাহিনীতে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। রাশিয়ার
সামরিক বাহিনীতে যে কোনো দেশের
বিদেশি নাগরিক অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। রাশীয়
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য।
চীন:
চীনের সামরিক ব্যয় ১৬৬ বিলিয়ন মার্কিন
ডলার। যা দেশটির জিডিপির দুই শতাংশ।
বিশ্বের মোট সামরিক ব্যয়ের নয় দশমিক পাঁচ
শতাংশ করে চীন ব্যয় করে তাদের সামরিক
বাহিনীর জন্য। আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের
মধ্যে চীনের অবস্থান তৃতীয়। এ দেশের
স্থলসীমার দৈর্ঘ্য প্রায় ২২ হাজার ৮০০
কিলোমিটার। এই বিশাল ভূখণ্ডের সার্বভৌমত্ব
রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে চীনের সেনাবাহিনী_
যার নাম 'পিপলস লিবারেশন আর্মি'
বা সংক্ষেপে পিএলএ। প্রতিষ্ঠিত হয় ১ আগস্ট,
১৯২৭। পিএলএর পাঁচটি শাখা হলো : পিএলএ
স্থলবাহিনী, পিএলএ নৌবাহিনী, পিএলএ
বিমানবাহিনী, দ্বিতীয় গোলন্দাজ কর্পস,
পিএলএ রিজার্ভ ফোর্স। চীনের নিয়মিত
সেনা সদস্য ২২ লাখ ৮৫ হাজার জন। রিজার্ভ
আর্মি আট লাখ। আধা সামরিক
বাহিনীতে রয়েছে ১৫ লাখ সদস্য। রয়েছে ১০
হাজার ট্যাংক, সুবিশাল গোলন্দাজ ইউনিট,
এন্টি ট্যাংক মিসাইল ইউনিট
এবং ২৪০টি পারমাণবিক অস্ত্র। পিএলএ
নৌবাহিনীতে রয়েছে ৩৫ হাজার কোস্টাল
ডিফেন্স ফোর্স। ৫৬ হাজার মেরিন
সেনা এবং ৫৬ হাজার রয়েছে পিএলএএন
অ্যাভিয়েশনে যারা কয়েকশ বিমান
এবং হেলিকপ্টার পরিচালনা করে।
নৌবহরে রয়েছে একটি বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ,
২৭টি উভচর যুদ্ধজাহাজ, ৪৮টি ফ্রিগেজ জাহাজ,
২৭টি ডেস্ট্রয়ার, ১৫টি কারভিটি জাহাজ,
১০টি নিউক্লিয়ার সাবমেরিন, ৪০টি সাবমেরিন।
পিএলএ বিমানবাহিনী রয়েছে :
৩৭০টি জঙ্গিবিমান, ১১৮টি বোমারু বিমান
এবং ১ হাজার ১৩০টি যুদ্ধবিমান। অস্ত্র
উৎপাদনে চীনের রয়েছে বিশেষ খ্যাতি।
বিশ্বে অনেকগুলো দেশে তারা অস্ত্র
রপ্তানি করে থাকে। চীন জাতিসংঘ
নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য। প্রতিষ্ঠার
পরে পিপলস লিবারেশন আর্মি গৃহযুদ্ধ, দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধ, সীমান্ত সংঘাত থেকে শুরু
করে সামরিক প্রতিরক্ষার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার
মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশ নিয়েছে।
ভারত:
ভারতীয় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও
বিমানবাহিনী এবং একাধিক অন্যান্য
আন্তঃপরিসেবা দাতা সংস্থাকে নিয়ে গঠিত
ভারতীয় সামরিক বাহিনী। ভারতের
প্রতিরক্ষা বাজেট ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার_
যা বিশ্বের অষ্টম বৃহৎ বাজেট এবং মোট
বাজেটের দুই দশমিক ছয় শতাংশ। ভারতের
সামরিক বাহিনীতে মোট ১,৩২৫,০০০ জন নিয়মিত
সেনা, ১,১৫৫,০০০ জন সংরক্ষিত সেনা,
এবং ১,২৯৩,৩০০ জন আধা-সামরিক সেনা রয়েছে।
ভারতীয় উপকূল রক্ষীবাহিনী, কেন্দ্রীয়
বাহিনী এবং স্ট্রাটেজিক ফোর্সেস কমান্ড
সেনাবাহিনীর প্রধান সহকারী বাহিনী।
বর্তমানে সেনাবাহিনীর ব্যাপক সম্প্রসারণ ও
আধুনিকীকরণের কাজ চলছে। ভারতীয় সামরিক
বাহিনী সক্রিয়ভাবে সামরিক মহাকাশ
কর্মসূচির পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছে। এ
ছাড়া ভারতের সামরিক বাহিনী একটি মিসাইল
প্রতিরক্ষা শিল্ড ও পরমাণু ট্রায়াড ক্ষমতাও
গড়ে তুলছে। ভারতের সামরিক বাহিনীর
ভাণ্ডারে রয়েছে ৫,৯৭৮টি সাঁজোয়াা ট্যাংক,
দুটি বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ, ছয়টি উভচর
যুদ্ধজাহাজ, ১৫টি ডেস্ট্রয়ার যুদ্ধজাহাজ,
২৮টি ফ্রিগেট, ৩৬টি করভিট যুদ্ধজাহাজ,
৫৪টি পেট্রল বোট, দুটি নিউক্লিয়ার সাবমেরিন,
১৮টি সাবমেরিন, ৯০১টি যুদ্ধবিমান, ৯১টি বোমারু
বিমান, ২২০ জঙ্গিবিমান,
১৪০টি সাঁজোয়া হেলিকপ্টার এবং ৯০
থেকে ১০০টি পরমাণু অস্ত্র। ভারতের সামরিক
বাহিনীতে নেপাল ও ভুটানের নাগরিকসহ
তিব্বতি উদ্বাস্তু
যারা স্থায়ীভাবে ভারতে বসবাস
করছে তারা যোগ দিতে পারে। ভারতের
সামরিক বাহিনী পাক-ভারত যুদ্ধ ১৯৪৭, ১৯৬৫
এবং ১৯৭১ পর্তুগাল-ভারত যুদ্ধ ও চীন-ভারত
যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। এই বাহিনী অভ্যন্তরীণ
নকশালবাদ, সন্ত্রাসবাদ এবং জম্মু ও কাশ্মীর,
পাঞ্জাব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আঞ্চলিক
বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে সাফল্য দেখালেও
মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ
নানা অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে সমালোচিত
হয়েছে।
ইরান:
১৯২৫ সালে পাহলাভি সাম্রাজ্য দেশটির
ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে দ্রুততার সঙ্গে আধুনিক
ইরানি সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলে।
সেনা কর্মকর্তাদের ইউরোপ এবং আমেরিকার
সামরিক একাডেমীতে প্রশিক্ষণ দেওয়ার
ব্যবস্থা করা হয়। সর্বাধিক অস্ত্র আসত মিত্র
রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ১৯৪১
সালে ইরানি সামরিক বাহিনী ব্রিটিশ-
সোভিয়েত আক্রমণ প্রতিহত করে। দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ওমানের সুলতানের
পক্ষাবলম্বন করে। বিপ্লব-
পূর্ববর্তী সময়ে জাতিসংঘের
শান্তি মিশনে বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল ইরানের।
আয়াতুল্লাহ খামেনির নেতৃত্বে ১৯৭৯ সালের
ইসলামিক বিপ্লবের পরে যুক্তরাষ্ট্রের
সঙ্গে সম্পর্ক সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে মোড় নেয়।
মার্কিন অবরোধের জন্য ইরান নিজেদের
অস্ত্রশস্ত্র নিজেরাই রক্ষণাবেক্ষণ ও
পরিচালনা শুরু করে। ১৯৮০-র
দশকে দেশটিকে প্রতিবেশী ইরাকের
সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হয়। ১৯৮৯ সালে ইরান
সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে অস্ত্র
আমদানি করে সামরিক বাহিনী পুনর্গঠন শুরু
করে। মার্কিন-ইসরায়েলের শত বাধার পরও
দেশটি বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শক্ত
সামরিক শক্তি। ড্রোন প্রযুক্তির
অধিকারী শীর্ষ পাঁচটি দেশের অন্যতম ইরান।
ইরান বিশ্বের সবচেয়ে পর্বতময় দেশগুলোর
একটি। ইরানে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ খনিজ তেল ও
প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডার আছে। ইরান
প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত
অস্তিত্বশীল বৃহৎ সভ্যতাগুলোর মধ্যে অন্যতম।
দেশটির মোট আয়তন ১৬,৪৮,০০০ বর্গকিলোমিটার।
ইরানের নিয়মিত সেনা সদস্য ৫,২৩,০০০ জন,
রিজার্ভ আর্মি ৩,৫০,০০০ জন এবং আধা-সামরিক
বাহিনীতে রয়েছে ১৫,১০,০০০ জন সদস্য।
সেনাবাহিনী, স্থলবাহিনী, বিমানবাহিনী,
নৌবাহিনী, বিমান
প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং আইআপজিসি নিয়ে ইর
বাহিনী গঠিত। দেশটির সামরিক বাজেট ১০
বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
পাকিস্তান:
সেনা, নৌ, বিমান, মেরিন, আধা-সামরিক
এবং এসপিডি বাহিনী নিয়ে পাকিস্তানি সশস্ত্
বাহিনী গঠিত। ব্রিটিশ ভারতে সামরিক
বাহিনীর একটি অংশ
নিয়ে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী গঠিত হয়
১৯৪৭ সালে। পাকিস্তানি নিয়মিত সেনা সদস্য
৬,১৭,০০০ জন, রিজার্ভ আর্মি ৫,১৩,০০০ জন
এবং আধা-সামরিক বাহিনীতে রয়েছে ৩,০৪,০০০
জন সদস্য। পাকিস্তানের
রয়েছে ৪,০০০টি সাঁজোয়া ট্যাংক,
৪টি ডেস্ট্রয়ার যুদ্ধজাহাজ, ১৪টি ফ্রিগেট,
৮টি করভিট যুদ্ধজাহাজ, ২৮টি পেট্রল বোট,
৮টি সাবমেরিন, ৩২৫টি যুদ্ধবিমান,
৩০টি বোমারু বিমান, ২৫০টি জঙ্গিবিমান,
১১০টি সাঁজোয়া হেলিকপ্টার এবং ১১০টি পরমাণু
অস্ত্র। পাকিস্তানের সামরিক বাজেট সাত
দশমিক আট বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দেশটির
জিডিপির দুই দশমিক সাত শতাংশ।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীতে বিশেষ
রেজিমেন্ট আছে প্যালেস্টাইন ও অন্যান্য আরব
জাতিদের জন্য। সামরিক দিক থেকে পাকিস্তান
চীনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। এই
বাহিনী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আল-
কায়েদা ও তালেবান নির্মূলে কাজ করছে।
পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদের
বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র তারা।
জাতিসংঘের শান্তিমিশনেও অংশগ্রহণ
রয়েছে এই বাহিনীর। ১৯৭১ সালের
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান
সেনাবাহিনী ও তাদের স্থানীয়
সহযোগী রাজাকার বাহিনী, আলবদর ও আল
শামসের হাতে ৩০ লাখ সাধারণ মানুষের
প্রাণহানি ঘটে, ধর্ষিত হয় ২ লাখ নারী। যুদ্ধ
শেষে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১৬ ডিসেম্বর
ঢাকার রেসকোর্সে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয়
সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত মিত্রবাহিনীর
কাছে আত্দসমর্পণ করে। প্রায় ৯৩ হাজার
পাকিস্তানি সেনার এই আত্দসমর্পণ ছিল
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে সর্ববৃহৎ আত্দসমর্পণের
ঘটনা। বাংলাদেশের
স্বাধীনতা যুদ্ধে বর্বরোচিত এবং ন্যক্কারজনক
কর্মকাণ্ডের জন্য পাকিস্তানি সামরিক
বাহিনী নিন্দিত। এ ছাড়া সামরিক অভ্যুত্থান,
নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত,
পরোক্ষভাবে সরকারকে নিয়ন্ত্রণ,
দ্বিচারিতা ইত্যাদি কারণে বাহিনীটি প্রায়
আলোচনা-সমালোচনায় থাকে।-তথ্যসূত্র:
ওয়েবসাইট।

Comments