স্বাধীন:- সকাল থেকে গা-হাত-পায়ে অসহ্য ব্যথা।
মাথাটাও ঝিম ঝিম করছে। তাই
তড়িঘড়ি করে একটি পেন কিলার
খেয়ে কাজে নেমে পড়লেন। আর
এভাবে চলতে চলতে তৈরি হল পেইন
কিলার অ্যাডিকশন। জ্বর
হলে না জেনে বুঝে অ্যান্টিবায়োটিক
খাওয়া, ব্যথা হলে যখন তখন পেইন কিলার
খাওয়া, এসিড হলে মুঠো-মুঠো অ্যান্টাসিড
খাওয়া এগুলো তো রোজকার রুটিন। কিন্তু
আপনি যে কিছু না ভেবেই
অ্যান্টিবায়োটিক, পেইন কিলার বা অন্য
কোনও ওষুধ খেয়ে ফেলেন, এতে কিন্তু
সমস্যা আছে। তাই জেনে রাখুন বভিন্ন
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে।
ড্রাগ ওভারডোজ
১। অনেকে ভাবেন, কড়া ডোজে বেশি ওষুধ
খেলে তাড়াতাড়ি সেরে উঠবেন। ওষুধ
না জেনে খাওয়ার ফলে রোগী ছটফট
করতে থাকেন, বুক ধড়ফড় করে, ঘাম হয়,
ব্লাড প্রেশার ওঠানামা করে, হার্টবিটও
কম-বেশি হয়।
সময়মতো চিকিৎসা না হলে রোগী অজ্ঞানও
হয়ে যেতে পারে। এক একটি ওষুধের
ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া একেক রকম।
তেই একে অপরের
সাথে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়।
২। ড্রাগ ওভারডোজ বাড়াবাড়ি রকমের
হলে,
দেরি না করে হাসপাতালে ভর্তি কড়া প্রয়োজন।
স্যালাইনও দিতে হতে পারে। আর যদি বার
বার ড্রাগ ওভারডোজ হয়,
তাহলে মনোবিদের সাহায্য
নিয়ে কাউন্সেলিং করান।
৩। প্রেগনেন্সির সময় ডাক্তারের পরামর্শ
ছাড়া কোন ওষুধ খাবেন না। অন্যথা গর্ভস্থ
সন্তানের হার্টের সমস্যা, স্পাইনাল
কার্ডের সমস্যা, জন্ডিস, ব্লাড সুগার
কমে যাওয়া, ইত্যাদি নানা রকমের অসুখ
হতে পারে।
সমস্যা ও সমাধান
১। অ্যান্টিবায়োটিক ৬-৮ দিনের
বেশি দেওয়া হয়না। ডোজ
বেশি হলে বমি ভাব, ক্ষুধা না লাগা,
ডায়রিয়া, শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া,
গায়ে লালচে রেশ ও চুলকানি, কিডনির
সমস্যা হতে পারে। কিছু কিছু
ক্ষেত্রে খিঁচুনি দেখা দিতে পারে।
অ্যান্টিবায়োটিক
খেলে বেশি পরিমাণে পানি খেতে বলা হয়।
কোর্স শেষ
না করে মাঝপথে অ্যান্টিবায়োটিক
খাওয়া বন্ধ করে দিলে ভবিষ্যতে সেই
অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ নাও
করতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক
রেজিস্টেন্স তৈরি হয়।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে ওষুধ দেয়া হয়।
প্রয়োজনে অ্যান্টি ভমিটিং,
অ্যান্টি ডায়রিয়া ট্যাবলেট দেওয়া হয়।
২। ওরাল কনট্রাসেপটিভ পিল নিয়মিত
দীর্ঘদিন ধরে খেলেও
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সাধারণত
যে পিল ব্যবহার করা হয়,
তাতে মাথাব্যথা, বমিভাব, ওজন
বেড়ে যাওয়া, শরীরের পানি কমে যাওয়া,
ডিপ্রেশন, মূত্রনালির সংক্রমন
ইত্যাদি হতে পারে। ওষুধ বন্ধ করে দেয়ার
পর পিরিয়ডস অনেকদিন পর্যন্ত বন্ধ থাকে।
লিভারের সমস্যা ও জন্ডিসও
দেখা দিতে পারে। ৩৫ বছরের
বেশি বয়সিরা পিল ব্যবহার
করলে রক্তে কোলেস্টেরল ও
ট্রাইগ্লিসারাইডের
মাত্রা বেড়ে যাওয়ার
ফলে করোনারি আর্টারির সমস্যাও
হতে পারে। তাই ৩৫ বছরের পর পিল
ব্যবহার না করে অন্য কনট্রাসেপটিভ
ব্যবহার করুন।
৩। প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য যে কোনও
ব্যথার ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ
ছাড়া খাওয়া উচিত নয়। কেউ যদি একটার
জায়গায় ৩/৪ টি করে পেন কিলার খান
প্রতিদিন তাহলে তাঁর সমস্যা হতেই
পারে। এর ফলে গ্যাসট্রিক, আলসার,
পাকস্থলীতে ঘা, কিডনির অসুখ, ইউরিন
বন্ধ ইত্যাদি হতে পারে।
অ্যাজমা থাকলে সেটি বেড়ে যেতে পারে।
ব্যথার ওষুধে অ্যালার্জি হলে ডাক্তারের
সাথে যোগাযোগ করুন।
৪। অনেক আর্থ্রাইটিসের
রোগীকে নিয়মিত ব্যথার ওষুধ খেতে হয়।
ফলে ব্লাড প্রেশার ও ডায়বেটিস দু’টোই
বাড়তে থাকে সাথে কিডনি বা হার্টের
সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
৫। ব্যাথা কমানোর জন্য অনেকেই
স্টেরয়েড ব্যবহার করে থাকেন
যা থেকে চোখে ছানি, ডায়াবিটিস বৃদ্ধি,
অস্টিোপোরেসিস ইত্যাদি হতে পারে।
তবে এখন অনেক পেন রিলিভার
আছে যেগুলির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম।
তবে পেন কিলার বা স্টেরয়েড কোনটার
অ্যাডেকশন থাকলে তা ধীরে ধীরে বন্ধ
করলে ভাল হয়।
৬। নিয়মিত অ্যান্টাসিড
খেলে রক্তসল্পতা নার্ভের সমস্যা,
অস্টিোপোরেসিস হতে পারে।
টানা না খেয়ে বিরতি দিন।
৭। জেনে বুঝে ওষুধ খাবেন। ডাক্তারের
পরামর্শ নিন। অন্য কেউ কোনও ওষুধে উপকৃত
হয়েছে বলে আপনিও হবেন,
এমনটা ভাবলে অনেক ভুল করবেন।
Comments
Post a Comment