কী হচ্ছে ১, ২ ও ৫ টাকা নিয়ে ??

স্বাধীন:- বাজার থেকে এক ও দুই টাকা মূল্যমানের
মুদ্রা (ধাতব ও কাগুজে) সরকার
উঠিয়ে নেবে না। পাঁচ টাকাকে ব্যাংক
মুদ্রার পরিবর্তে সরকারি মুদ্রায় রূপান্তর
করবে শুধু। অবশ্য এ জন্য আইনকানুন
সংশোধন করবে সরকার।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক
সূত্র এবং সম্প্রতি অর্থ
মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ‘পাঁচ টাকা মূল্যমান
পর্যন্ত নোট ও
ধাতবমুদ্রাকে সরকারি মুদ্রায় রূপান্তর’
শীর্ষক বৈঠকের কার্যপত্র বিশ্লেষণে এ
তথ্য পাওয়া গেছে।
অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি এক ও দুই টাকার নোট
উঠিয়ে নেওয়া এবং পাঁচ
টাকাকে সরকারি মুদ্রা করার
কথা সাংবাদিকদের জানান। এ
নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ।
পরদিন অবশ্য তিনি বলেন, এক ও দুই টাকার
নোট চালু থাকবে। মানুষ ব্যবহার
না করলে একসময় এমনি এমনিই
উঠে যাবে এগুলো।
দেশের মুদ্রা চলাচলের সর্বশেষ তথ্য
নিয়ে দৈনিক ভিত্তিতে প্রতিবেদন
তৈরি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত
বুধবার তৈরি হওয়া প্রতিবেদনে আগের
দিন মঙ্গলবার পর্যন্ত হিসাবে দেখা যায়,
দেশে বর্তমানে ৯৩ হাজার ১৫০
কোটি টাকা মূল্যমানের কাগুজে নোট ও
ধাতবমুদ্রা প্রচলিত রয়েছে। এক
পয়সা থেকে এক হাজার টাকার নোট
পর্যন্ত সব মুদ্রাই রয়েছে এই ৯৩ হাজার
১৫০ কোটি টাকার মধ্যে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন মতে,
প্রচলিত মোট মুদ্রার মধ্যে গত মঙ্গলবার
পর্যন্ত ব্যাংক নোটের মূল্যমান হচ্ছে ৯২
হাজার ৩৫৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আর
সরকারি মুদ্রার মূল্যমান হচ্ছে ৭৯৫
কোটি ৬০ লাখ টাকা।
বাজারে ১, ৫ ও ১০ পয়সার যে ধাতব
মুদ্রা চালু রয়েছে, সরকার
এগুলোকে বাতিল ঘোষণা করেনি। ২৫ ও ৫০
পয়সার ধাতব মুদ্রাও আজকাল তেমন
দেখা যায় না। এমনকি এক টাকার নোটও
দিন দিন বিরল হয়ে যাচ্ছে।
দেশের ব্যাংক নোট বা ব্যাংক
মুদ্রা হচ্ছে ৫, ১০, ২০, ৫০, ১০০, ৫০০ ও ১০০০
টাকা মূল্যমানের নোটগুলো। এগুলো বের
করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর ১, ৫, ১০, ২৫
ও ৫০ পয়সা, এক টাকা ও দুই টাকার নোট ও
ধাতব মুদ্রা হচ্ছে সরকারি মুদ্রা।
এগুলো অর্থ মন্ত্রণালয় বের করে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কার্যপত্রে বলা হয়,
১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরে দেশের মোট দেশজ
উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় ব্যাপক
মুদ্রার হার ছিল ১০ শতাংশ, ২০১২-১৩
অর্থবছরে তা হয়েছে ৫১ দশমিক ৮৬
শতাংশ।
কমছে সরকারি মুদ্রা: অর্থ মন্ত্রণালয়
বলছে, সরকারি মুদ্রা ৪০ বছর আগে ছিল
তখনকার জিডিপির শূন্য দশমিক ২৭,
ব্যাপক মুদ্রার ২ দশমিক ৬৯
এবং বাজেটের ৩ দশমিক ২১ শতাংশ।
তখন চলতি মূল্যে জিডিপি ১২ হাজার ৫৭৪
কোটি, ব্যাপক মুদ্রা ১ হাজার ২৬৯
কোটি ৬০ লাখ ও বাজেটের আকার ছিল ১
হাজার ৫৬ কোটি টাকা।
বর্তমানে সরকারি মুদ্রার হার
কমে হয়েছে জিডিপির শূন্য দশমিক ০৬,
ব্যাপক মুদ্রার শূন্য দশমিক ১১
এবং বাজেটের শূন্য দশমিক ৩১ শতাংশ।
মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত নভেম্বর
পর্যন্ত বাজারে প্রচলিত মোট মুদ্রার
মধ্যে ব্যাংক মুদ্রা ৯৯ দশমিক ১৭ শতাংশ
আর সরকারি মুদ্রা শূন্য দশমিক ৮৩
শতাংশ। ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরে মোট মুদ্রার
মূল্যমান ছিল ৩১৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা,
যার মধ্যে ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ ছিল
সরকারি মুদ্রা। কিন্তু এরপর প্রতিবছরই
মোট মুদ্রার তুলনায়
সরকারি মুদ্রা কমতে থাকে।
অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, চার
দশকে দেশের অর্থনীতি সম্প্রসারিত
হয়েছে এবং লেনদেনের জন্য প্রচলিত
মুদ্রার পরিমাণও বেড়েছে। কিন্তু সেই
সঙ্গে তাল
মিলিয়ে বাড়েনি সরকারি মুদ্রা।
আট পয়সা সমান এক টাকা!:
সরকারি মুদ্রাকে সরকারের ঐতিহ্যের
স্মারক বলে মনে করে অর্থ মন্ত্রণালয়।
কার্যপত্রে বলা হয়েছে, ১৯৭৪-৭৫
থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দেশের
বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৩
শতাংশ। আবার সরকারি মুদ্রার ক্রয়
ক্ষমতাও কমছে দিন দিন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪০ বছর আগের এক
টাকার ক্রয়ক্ষমতা বর্তমানে ১২ টাকা ৪৫
পয়সার সমান অর্থাৎ এখনকার এক
টাকা ওই সময়ের ৮ পয়সার সমান।
মন্ত্রণালয় বলছে, এই অবস্থা প্রতিহত
করারও উপায় রয়েছে। আর সেটিই
হচ্ছে পাঁচ টাকা মূল্যমান পর্যন্ত নোট ও
ধাতব মুদ্রাকে সরকারের মালিকানায়
নিয়ে আসা।
পাঁচ টাকাকে সরকারি মুদ্রা করার
প্রভাব: পাঁচ
টাকাকে সরকারি মুদ্রা করা হলে দেশের
মুদ্রা ব্যবস্থাপনার ওপর এর কী প্রভাব
পড়বে—তাও বিশ্লেষণ করেছে অর্থ
মন্ত্রণালয়। এতে প্রচলিত মোট মুদ্রার
তুলনায় সরকারি মুদ্রার হার বর্তমানের
শূন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ থেকে ১ দশমিক
৫০ শতাংশে উন্নীত হবে।
এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের
কাছে সরকারের ঋণ
পর্যায়ক্রমে কমবে ৭৯০ কোটি টাকা।
মোট অর্থের জোগানের কোনো পরিবর্তন
হবে না বলে মূল্যস্ফীতিতে এর
কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ,
সরকারি মুদ্রা যতটা বাড়বে ততটাই
কমবে ব্যাংক নোট বা মুদ্রা।
বর্তমানে বাজারে প্রচলিত পাঁচ টাকার
নোটগুলো বাতিলেরও প্রয়োজন হবে না।
পাঁচ টাকা নোট ছাপানোর জন্য যে খরচ
পড়বে তা বাদ দিয়ে বাকি অর্থ
থাকবে সরকারের আয় হিসেবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, পাঁচ
টাকার সরকারি নোটগুলো বাংলাদেশ
ব্যাংকের নোটের জায়গায়
প্রতিস্থাপিত হবে। এই প্রতিস্থাপন ও
নতুন পাঁচ টাকা নোট ছাপানোর খরচ
সরকার বহন করবে—যাতে ৩০০-৩৫০
কোটি টাকার মতো খরচ হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও
নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান
প্রথম আলো কে বলেন, এক ও দুই টাকার
ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ার বিবেচনায় পাঁচ
টাকা সরকারি মুদ্রা হতেই পারে।
এতে মানুষের ক্ষতি হওয়ার কিছু নেই,
বিভ্রান্তিরও কিছুই নেই। পাঁচ টাকার
নিচের সব মুদ্রাই মানুষের
চাহিদা অনুযায়ী দেশে চালু থাকবে।

Comments