স্বাধীন:- ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্ব বিচারের সর্বোচ্চ মঞ্চ হলো বিশ্বকাপ। এই
মঞ্চে বিশ্বসেরা ক্রিকেটাররা উজাড় করে দেন নিজেদের সর্বোচ্চটা। এই মহাযজ্ঞের ইতিহাসের পাতায় পাতায় লেখা কত ক্রিকেট-বীরের মহাকাব্য। এমন অজস্র কীর্তির মধ্য থেকে আঙুল
গুনে কয়েকটিকে বের করে আনা কঠিন এক কাজই
বটে। বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এই কঠিন
কাজটিই করতে হলো সার্বিক বিচার-বিশ্লেষণ
সাপেক্ষে। প্রিয় পাঠক, আসুন একবার চোখ
বুলিয়ে নেওয়া যাক বিশ্বকাপ ক্রিকেটের
ইতিহাসের সেরা সাতটি ব্যক্তিগত
পারফরম্যান্সে। লিখেছেন নাইর ইকবাল
উন্মাতাল লয়েড
ফাইনাল, ১৯৭৫
নিজের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিটি করার জন্য এত
বড় মঞ্চ বোধ হয় আর পেতেন না ক্লাইভ লয়েড।
১৯৭৫ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে তাঁর ৮৫
বলে ১০২ রানের ইনিংসটি শুধু তাঁর প্রথম
ওয়ানডে সেঞ্চুরিই ছিল না, ওটা ছিল ওয়েস্ট
ইন্ডিজকে প্রথমবারের মতো বিশ্বজয়ের স্বাদ
দেওয়ার প্রধান অনুষঙ্গও। সত্তরের দশকে লয়েডের
নেতৃত্বেই ক্রিকেটের অদম্য
শক্তি হয়ে ওঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিবীয়দের
শ্রেষ্ঠত্বের শুরুটাও হয়েছিল অধিনায়কের এই
অনবদ্য ইনিংসে।
পঁচাত্তরের বিশ্বকাপ ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের
প্রতিপক্ষ ছিল অস্ট্রেলিয়া।
টসে জিতে অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক ইয়ান চ্যাপেল
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথমে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ
জানান। লয়েড যখন ব্যাটিংয়ে নামেন, তখন তাঁর
দল ৫০ না পেরোতেই হারিয়ে বসেছে তিন–
তিনটি উইকেট। বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে লয়েড
মাঠে নেমে পুরো দায়িত্ব যেন নিজের কাঁধেই
তুলে নেন। শুরুর দিকে ডেনিস লিলিকে মিড
উইকেট বাউন্ডারির বাইরে আছড়ে ফেলার পরই
চশমাধারী এই গ্রেট যেন বুঝে যান
দিনটি একান্তই তাঁর। লিলির
একটি বাউন্সারকে হুক করে ফেলেন গ্যালারিকে।
ব্যক্তিগত ২৬ রানে লিলির বলেই তাঁর ক্যাচ
অবশ্য ফেলে দিয়েছিলেন রস এডওয়ার্ডস।
লয়েডের মতো ব্যাটসম্যানকে ‘জীবনদান’
যে কতটা ভয়ংকর হতে পারে, সেটাই সেদিন
অস্ট্রেলীয়রা বুঝেছিল হাড়ে হাড়ে। ৮২
বলে তিনি পূরণ করেন সেঞ্চুরি। সময় নেন মাত্র
১০০ মিনিট। ১২ চার ও দুই ছয়ে সাজানো এই
ইনিংসটিই আসলে ব্যবধান গড়ে দিয়েছিল প্রথম
বিশ্বকাপ ফাইনালের।
গিলমোরের দাপট
সেমিফাইনাল, ১৯৭৫
অস্ট্রেলিয়া তখন বিশ্ব কাঁপাচ্ছে ডেনিস
লিলি আর জেফ টমসনের আগুনে পেস বোলিংয়ে।
১৯৭৫ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার
মুখোমুখি ইংল্যান্ডের বড় উদ্বেগের কারণ ছিল এই
দুই ফাস্ট বোলার।
কনকনে ঠান্ডা বাতাসে হেডিংলির
সবুজে মোড়া উইকেটে লিলি আর
টমসনকে নিয়ে ইংলিশদের
ভাবনাটা স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু কোথায়
লিলি, কোথায় টমসন! হেডিংলিতে সব
আলোটা সেদিন কেড়ে নিলেন ২৩ বছরের এক তরুণ,
আগে যাঁর অভিজ্ঞতা বলতে ছিল দুটি এক দিনের
ম্যাচ খেলা। উইকেটের সবুজ আর
এলোমেলো বাতাসকে দারুণভাবেই ব্যবহার
করলেন গিলমোর। তাঁর সুইংয়ে বিপর্যস্ত
হলো ইংলিশরা। টানা ১২ ওভার বল করে মাত্র ১৪
রান দিয়ে তিনি তুলে নিলেন ছয়-ছয়টি উইকেট।
ইংল্যান্ড অলআউট হয়ে গেল মাত্র ৯৩ রানে।
ইংল্যান্ডকে ৯৩ রানে অলআউট
করে অস্ট্রেলীয়রা সহজ জয়ের স্বপ্ন দেখলেও
তাদের জয়টা কিন্তু ছিল ঘাম ঝরানোই। ৯৪
রানের লক্ষ্য সামনে নিয়ে ৩৯ রানে ৬ উইকেট
হারিয়ে বসেছিল অস্ট্রেলিয়া। এই বিপর্যয়কর
পরিস্থিতিতে ত্রাতা আবির্ভূত হলেন সকালেই
বল হাতে প্রলয়কাণ্ড ঘটানো গিলমোর। এবার তাঁর
ব্যাট থেকে এল মহামূল্যবান ২৮টি রান। ব্যাটে-
বলে এমন নৈপুণ্য বিশ্বকাপ খুব কমই দেখেছে।
ভিভ দুঃস্বপ্ন
ফাইনাল, ১৯৭৯
১৯৭৯–এর দ্বিতীয় বিশ্বকাপে অবিসংবাদিত
ফেবারিট হিসেবেই ইংল্যান্ড গিয়েছিল
চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পঁচাত্তরের প্রথম
বিশ্বকাপ জয়ের পর তারা তত
দিনে গড়ে তুলেছে ইতিহাসের অন্যতম সেরা দল।
ফেবারিট হওয়াটা যদি চাপ হয়, সেই চাপও
ক্যারিবীয়রা দুপায়ে দলেছিল অনন্য কারিশমায়।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফাইনাল খেলাটাও তাই সেবার
একপ্রকার অনুমিতই ছিল।
ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রতিপক্ষ ছিল
ইংল্যান্ড। মাইক ব্রিয়ারলির নেতৃত্বে ইংল্যান্ড
দলটিও মন্দ ছিল না। জেফরি বয়কট, ইয়ান বোথাম,
গ্রাহাম গুচ, ডেভিড গাওয়ারদের
সমন্বয়ে ক্যারিবীয়দের চ্যালেঞ্জ
জানাতে প্রস্তুত ছিল তারাও। কিন্তু ইংলিশদের
সামনে সেবার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন একজন
—ভিভ রিচার্ডস।
আরও একজনের কথাও না বললেই নয়—জোয়েল
গার্নার। মাত্র ৩৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে গার্নার
ধসিয়ে দিয়েছিলেন ইংলিশ ব্যাটিং। কিন্তু
পরিবেশ-পরিস্থিতি বিচারে ভিভ রিচার্ডসের
১৩৮ রানের অনন্য ইনিংসটিই মূলত মোড়
ঘুরিয়ে দিয়েছিল ’৭৯ বিশ্বকাপ ফাইনালের।
টসে জিতে ইংল্যান্ড ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ব্যাট
করতে পাঠিয়েছিল প্রথমে। ৯৯ রানে ৪ উইকেট—
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে খাদের এই
কিনারা থেকে টেনে তুললেন রিচার্ডস।
ফাইনালের আগে রিচার্ডসের ব্যাটিং কিন্তু
মোটেও তাঁর নামের প্রতি সুবিচার করেনি। তাঁর
সর্বোচ্চ ইনিংসটা ছিল ৪২ রানের। কিন্তু
ফাইনালের ভিভ ছিলেন সম্পূর্ণ আলাদা।
উইকেটের চারদিকে শটের ফুলঝুরি ছোটালেন।
ব্যাকরণ খুব একটা ভাঙেননি। ১৫৭ বল
খেলে ১১টি চার ও তিনটি ছয়ে সাজিয়ে গড়লেন
১৩৮ রানের এক হিরণ্ময় ইনিংস। ইংল্যান্ডের
লড়াকু মানসিকতাকে দুমড়ে দিয়েছিলেন তিনি।
সঙ্গে কলিস কিংয়ের কথা না বললেই নয়।
রিচার্ডসের ১৩৮ রানের সঙ্গে কিংয়ের ৮৬
রানের
ইনিংসটি না হলে হয়তো স্কোরবোর্ডে ২৮৬ রান
ওঠে না। ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত ৯২
রানে জিতে টানা দ্বিতীয় বারের মতো বিশ্ব
জয় করে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
কপিল কাহিনি
গ্রুপ পর্ব, ১৯৮৩
বিশ্বকাপ ইতিহাসে কোনো দলের ভাগ্য
গড়ে দেওয়া এমন ইনিংস আর
আছে কি না সন্দেহ। হোক না প্রতিপক্ষ
জিম্বাবুয়ে, ১৯৮৩ বিশ্বকাপের আগন্তুক, সেই
সময়কার আইসিসির সহযোগী সদস্য। কিন্তু
টানব্রিজ-ওয়েলসের সবুজে ঘেরা নেভিল
গ্রাউন্ডে সেদিন কপিল তাঁর ১৭৫ রানের
ইনিংসটি খেলেছিলেন একেবারে সুতোর ওপর
দাঁড়িয়ে। ছোট দল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই
আগে ব্যাট করতে নেমে ভারতীয় ব্যাটিং সেদিন
কাঁপছিল। কপিল যখন উইকেটে এলেন, ৯ রানেই
নেই ভারতের ৪ উইকেট। কিছুক্ষণ পর
স্কোরটাকে ১৭/৫ বানিয়ে আউট যশপাল শর্মা।
কপিল এবার হাল ধরেন ভারতীয় ইনিংসের।
প্রথমে ধীরে-সুস্থে নিজের
ইনিংসকে গুছিয়ে নিতে থাকেন। এরপরই
হিসাবি প্রতি–আক্রমণে হকচকিয়ে দিতে থাকেন
জিম্বাবুইয়ানদের। ১৩৮ বলে অপরাজিত ১৭৫
রানের ইনিংসটি আপাতদৃষ্টিতে খুবই
আক্রমণাত্মক মনে হলেও পুরোটা সময়ই
পরিকল্পনামাফিক শট খেলেছেন। কপিল একপ্রান্ত
ধরে রাখলেও ভারতের অষ্টম উইকেট পড়ল ১৪০
রানে। এরপর সৈয়দ
কিরমানিকে সঙ্গে নিয়ে খেললেন ইতিহাসের
দিক পাল্টে দেওয়া সেই ইনিংস। সেঞ্চুরি পূরণ
করার পর শেষ ৭৫ রান করেন পরের ১১ ওভারে।
তাঁর ইনিংসে ছিল ১৬টি চার ও ৬টি ছক্কা। অন্য
পাশে কিরমানি উইকেট আঁকড়ে করেছিলেন
অপরাজিত ২৪। কপিলের ১৭৫ রান সেদিন ভারতীয়
ক্রিকেটকে এনে দিয়েছিল নতুন এক পরিচিতি।
উদ্দীপ্ত করেছিল নতুন চেতনায়। সেই
উদ্দীপনাতেই কি না, এক সপ্তাহ পরেই
পরাক্রমশালী ওয়েস্ট
ইন্ডিজকে মাটিতে নামিয়ে এনে বিশ্ব জয়
করেছিল ভারতীয় ক্রিকেট। দুঃখের বিষয়,
কপিলের এই অনবদ্য ইনিংসটির কোনো ভিডিও
ফুটেজ নেই। বিশ্বকাপের
সম্প্রচারকারী সংস্থা বিবিসির কর্মীরা যে ওই
দিনটিকেই বেছে নিয়েছিলেন ধর্মঘটের জন্য।
অবিশ্বাস্য অরবিন্দ
ফাইনাল, ১৯৯৬
ছিয়ানব্বইয়ে শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম
নায়ক অরবিন্দ ডি সিলভা। কলকাতার
সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে দলের
বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে ৪৭ বলে ৬৬ রান
করে মান বাঁচিয়েছিলেন দলের। লাহোরের
ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১২৪ বলে ১০৭
রানের ইনিংস দিয়ে রচনা করেন বিশ্ব জয়ের
গৌরবগাথা। কেবল ব্যাট হাতেই নয়, বল হাতেও
গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ব্রেক থ্রু এনে বিশ্বকাপ
ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ড
পারফরম্যান্সের উদহারণ গড়েন তিনি।
ফাইনালে আগে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া করেছিল
৭ উইকেটে ২৪১ রান। রানটা আরও বড় হতে পারত,
কিন্তু ডি সিলভাই ৪২ রানে ৩ উইকেট তুলে বড়
হতে দেননি। আউট করেছিলেন
ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ রানের মালিক
অধিনায়ক মার্ক টেলরকে। ফিরিয়েছিলেন আরেক
ব্যাটিংস্তম্ভ রিকি পন্টিংকে। সর্বশেষ ইয়ান
হিলিকে তুলে নিয়ে অল্পেই থামিয়ে দেন
অস্ট্রেলিয়াকে।
তাঁর ব্যাট হাতে নামাটাও খুব স্বাভাবিক
পরিস্থিতিতে হয়নি। পুরো বিশ্বকাপে পিঞ্চ
হিটিংয়ে প্রতিপক্ষকে ছত্রখান
করে দেওয়া সনাৎ জয়াসুরিয়া ও রমেশ
কালুভিতারানা খুব অল্পতেই ফিরে যান। এই
অবস্থায় পরাক্রমশালী অস্ট্রেলীয় বোলিংয়ের
সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানোই বিরাট এক
মানসিক শক্তির পরিচায়ক।
ডি সিলভা নিপুণভাবেই সেই পরিচয়
রেখে শ্রীলঙ্কাকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন।
খুনে গিলক্রিস্ট
ফাইনাল, ২০০৭
বিশ্বকাপ ফাইনাল কোনো ইতিহাসের জন্ম
দেবে না, সেটা কীভাবে হয়! ২০০৭ সালের
একঘেয়ে বিশ্বকাপও ইতিহাসকে দিয়ে গেছে এক
অনন্য উপহার। বারবাডোজের ফাইনালে অ্যাডাম
গিলক্রিস্টের ব্যাট থেকে বেরিয়ে আসে এক
খুনে ইনিংস, সেটি শুধু বিশ্বকাপেরই নয়, এক
দিনের ক্রিকেটেরই অন্যতম সেরা ইনিংসের
মর্যাদা পায়।
যেকোনো শ্রীলঙ্কানই
ভুলে যেতে চাইবে গিলক্রিস্টের ওই তাণ্ডব।
বৃষ্টির কারণে ৩৮ ওভারে নেমে আসা সেই
ম্যাচে টসে জিতে ব্যাটিং নিয়েছিল
অস্ট্রেলিয়াই। বল মাঠে গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই
গিলক্রিস্টের এক ঝড়ই লঙ্কানদের দ্বিতীয়বারের
মতো বিশ্বকাপ ট্রফিতে হাতের
ছোঁয়া লাগানোর স্বপ্নকে পরিণত
করে দুঃস্বপ্নে। ব্রিজটাউনের কেনসিংটন
ওভালে গিলক্রিস্টের ১২৯ মিনিটের
ঝড়ে চামিন্ডা ভাস, মুত্তিয়া মুরালিধরন,
দিলহারা ফার্নান্দো, সনাৎ জয়াসুরিয়া, লাসিথ
মালিঙ্গা—বিধ্বস্ত হয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার প্রায়
সব বোলারই। ফার্নান্দোকেই গিলক্রিস্টের এই
ইনিংসটি বোধ হয় পোড়ায় সবচেয়ে বেশি। কারণ,
এই দিলহারাই যে হাতছাড়া করেছিলেন
গিলক্রিস্টের এক ফিরতি ক্যাচ। দিলহারা যখন
হাত ফসকেছিলেন, গিলক্রিস্টের ব্যক্তিগত
খাতায় উঠেছিল মাত্র ৩১ রান। ১৩ চার আর
আটটি ছয়ে সাজানো তাঁর ইনিংসটি ছিল ১৪৯
রানের। ছয়গুলোর বেশির ভাগই ছিল
গ্যালারিতে আঁছড়ে ফেলা, বাউন্ডারিগুলো ছিল
চোখধাঁধানো। ১৯৯৯ ও ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার
অন্য দুটি বিশ্বকাপ ফাইনালও ছিল গিলক্রিস্ট
মহিমায় ভাস্বর। কিন্তু কেনসিংটন ওভালে ২০০৭
সালের ২৮ এপ্রিল, অস্ট্রেলিয়ার এই
উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান যা করেছিলেন, তা এক
কথায় অতুলনীয়, অদ্বিতীয়।
অলৌকিক ও’ব্রায়েন
গ্রুপ পর্ব, ২০১১
২০১১ সালের ২ মার্চ বেঙ্গালুরুর
চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে খুব বেশি দর্শক
ছিলেন না। ইংল্যান্ডের সঙ্গে আয়ারল্যান্ডের
লড়াই দর্শক টানবেই–বা কীভাবে! কিন্তু
যে হাজার খানেক দর্শক সেদিন
মাঠে এসেছিলেন—খেলাটি শেষ পর্যন্ত
দেখেছিলেন—তাঁরা সারা জীবন গল্প
করে বেড়ানোর মতো এক অসাধারণ ঘটনার
সাক্ষী হয়েছিলেন। সাক্ষী হয়েছিলেন এক
অখ্যাত আইরিশের ক্রিকেট বিশ্ব
কাঁপিয়ে দেওয়া এক রেকর্ডের। মাত্র ৬৩ বলে ১১৩
রানের দুর্ধর্ষ এক ইনিংস খেলে কেভিন
ও’ব্রায়েন নামের ওই আইরিশ ব্যাটসম্যান
হারিয়ে দিয়েছিলেন ইংল্যান্ডকে। অথচ
প্রথমে ব্যাট করে স্কোরবোর্ডে ৩২৭ রান তুলে দূর
কল্পনাতেও ইংলিশরা ভাবতে পারেনি পরাজয়ের
কথা। ৩২৮ রানের লক্ষ্য ব্যাট করতে নেমে ১১১
রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বসা আইরিশরা এই ম্যাচ
জিতে গিয়েছিল কেভিন ও’ব্রায়েনের ওই
অলৌকিক ইনিংসের কল্যাণেই। ৬ নম্বরে ব্যাট
করতে নেমেছিলেন কেভিন। উইকেটের
দিকে তিনি যখন হেঁটে যাচ্ছিলেন, তখন
মনোযোগ ছিল হারের ব্যবধান কমানোর দিকেই।
কিন্তু মাঠে গিয়েই বুঝে যান,
দিনটা ক্রিকেটবিধাতা বানিয়ে রেখেছেন তাঁরই
মনের মতো করে। যেভাবেই ব্যাট চালাচ্ছিলেন
সফল হচ্ছিলেন। ১২৩ মিনিট ক্রিজে থেকে ১৩ চার
আর ছয়টি ছয়ে তিনি এলোমেলো করে দেন জেমস
অ্যান্ডারসন, স্টুয়ার্ট ব্রড, টিম ব্রেসনান,
গ্রায়েম সোয়ান, পল কলিংউড ও মাইকেল
ইয়ার্ডির মতো বোলারদের। ১১৩ রান
করে তিনি যখন রান আউট হয়ে মাঠ ছাড়েন,
তখনো জয়টা ছিল ১২ রান দূরে। তবে ইতিহাসের
অন্যতম সেরা এই ইনিংসের উদ্দীপনায় অ্যালেক্স
কুসাক ও জন মুনি প্রয়োজনীয় সেই রান তুলে নেন
নিজেদের দুটি সংক্ষিপ্ত অথচ মহা গুরুত্বপূর্ণ
ইনিংসে।
Comments
Post a Comment