উল্কাপিণ্ড যখন মেমোরি ড্রাইভ

উল্কাপিণ্ডকে যদি একটা প্রাকৃতিক
মেমোরি ড্রাইভ বলা হয় তাহলে হয়ত
অনেকেই এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন
তুলে পারেন। কিন্তু অবাক করা হলেও
সত্যি যখন একটা উল্কাপিণ্ড
পৃথিবীতে এসে পড়ে তখন সেটা তার
ভিতরে সময় এবং মহাকাশ সম্পর্কে অনেক
তথ্য বয়ে নিয়ে আসে।
যেভাবে একটি কম্পিউটার হার্ডডিস্কের
চুম্বকের ভিতরে তথ্য সংরক্ষন
করা থাকে অনেকটা সেভাবেই তথ্য বহন
করে একটি উল্কাপিণ্ড। উল্কাপিণ্ডের
ভেতরে অবস্থিত ছোট ছোট চুম্বক
কণা এটি যে গ্রহাণু থেকে বিচ্ছিন্ন
হয়েছে সেটির তথ্য জমা করে রাখে। কিন্তু
পূর্বে এ তথ্যগুলো জানা মানুষের
পক্ষে সম্ভব হতো না।
বর্তমানে উল্কাপিণ্ডের
বয়ে নিয়ে আসা এসব তথ্য পুনঃরুদ্ধারের
একটি পথ বের করেছেন বিজ্ঞানীরা।
তবে দুর্ভাগ্যবশত এসব প্রাকৃতিক
হার্ডডিস্কের মধ্যে কোন এলিয়েনের গান
বা ভিডিও গেম থাকে না। কিন্তু
তারা তাদের মাতৃগ্রহাণু সম্পর্কে অনেক
মূল্যবান তথ্য বহন
করে যেগুলো থেকে আমরা পৃথিবীর অদূর
ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনেক কিছুই
জানতে পারবো।
সম্প্রতি ‘নেচার’ পত্রিকায় এ তথ্য
আবিষ্কার
পদ্ধতি সম্পর্কে একটি লেখা ছাপা হয়েছে।
প্রকাশিত ফিচারটির লেখক, ক্যামব্রিজ
ইউনিভার্সিটির ভূতত্ত্ববিদ রিচার্ড
হ্যারিসন বলেন, ‘এই পদ্ধতি আবিষ্কার
হওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের ধারণা ছিল
উল্কাপিণ্ডের ভেতরে অবস্থিত এসব ধাতু খুব
দুর্বল চৌম্বকীয় পদার্থ হিসেবে কাজ
করে’।
তিনি বলেন, ‘মনে করেন
আপনি একটি হার্ডডিস্কে কিছু তথ্য
জমা করে সেটাকে মাটির
নিচে চাপা দিয়ে রাখলেন এবং ৪.৫
মিলিয়ন বছর পর সেটাকে তুলে সেসব তথ্য
বের করার চেষ্টা করলেন।
যদি না আপনি নির্দিষ্ট ধরণের কোন
হার্ডডিস্ক ব্যবহার না করেন
তবে নিশ্চিতভাবে আপনি সমস্যায়
পড়বেন’।
কিন্তু হ্যারিসন এবং তার সহকর্মীরা হাল
ছাড়েননি। তারা বুঝতে পেরেছিলেন
যে উল্কাপিণ্ড থেকে তথ্য উদ্ধার
করা যদি সম্ভব হয় তাহলে আমরা পৃথিবীর
সৃষ্টি সম্পর্কে আমরা নতুন অনেক তথ্যই
জানতে পারবো।
এই উল্কাপিণ্ডের টুকরার উপর
শক্তিশালী উজ্জ্বল হাই-
ইনটেনসিটি রশ্মি ফেলে এটির ম্যাগনেটিক
সিগনাল বের করে তথ্য উদ্ধার করা হয়। এসব
মহাজাগতিক চুম্বক যেসব তথ্য বহন
করছে সেগুলো একটি চুলের এক হাজার
ভাগের একভাগের সমান সূক্ষ্ম।
হ্যারিসন এটাকে নামকরণ করেছেন
‘মহাজাগতিক প্রত্নতত্ত্ব’ হিসেবে।
বিষয়টি বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি লিখেছে
ন, যেন আমরা অনেক বছর আগের একটি স্ক্রল
(মোড়ানো কাগজবিশেষ)
খুঁজে পেয়েছি এবং এই পদ্ধতির
দ্বারা আমরা সেটাতে ছোট্ট ছোট্ট
অক্ষরে লেখা তথ্য উদ্ধার করতে সক্ষম
হয়েছি।
বিজ্ঞানীরা যেটা উদ্ধার করতে পেরেছেন
সেটা হচ্ছে এসব গ্রহাণু অনেকটা পৃথিবীর
ক্ষুদ্র সংস্করণ হিসেবে আচরণ করছে। এদের
ভেতরে তরল লোহা রয়েছে যারা ঘূর্ণনের
মাধ্যমে একটি চৌম্বকক্ষেত্র
তৈরি করেছে। ধীরে ধীরে এই গ্রহাণু
ঠাণ্ডা হলে এই তরল লোহা এবং পাথর
মিলে একটি শক্তিশালী এবং দীর্ঘদিন
টিকতে সক্ষম এমন একটি চুম্বক তৈরি করে।
কিন্তু যেহেতু এই গ্রহাণু আকারে তুলনামূলক
অনেক ছোট তাই এরা ঠাণ্ডা হতে কম সময়
লাগে।
‘এই পদ্ধতি আবিষ্কারের ফলে গ্রহাণু
নিয়ে আমাদের গবেষণার অনেক কিছুই বের
হয়ে আসবে। প্রচুর উল্কাপিণ্ড
আছে যেগুলো গবেষণার মাধ্যমে আমরা নতুন
অনেক কিছুই জানতে পারবো’- বলেন
হ্যারিসন।

Comments