‘দুই আঙুলে’ ডাবল সেঞ্চুরি!

সবে অকল্যান্ড অ্যাভন্ডেল কলেজ ক্রিকেট দলের
প্রথম একাদশে সুযোগ মিলল, চোখে তাঁর রঙিন
স্বপ্ন। তখনই ঘটল দুর্ঘটনাটা!
নিজেদের প্রতিষ্ঠানেই কাজ করছিলেন। বড় ভাই
বেন চালাচ্ছিলেন ফর্কলিফট (মালামাল বহনকারী
গাড়ি)। অসাবধানতাবশত যানটা উঠে গেল
এক্কেবারে বাঁ পায়ের ওপরে। মুহূর্তেই আর্ত-
চিৎকার...ক্রমশ ফিকে হয়ে এল ১৩ বছর বয়সী
মার্টিন গাপটিলের রঙিন পৃথিবী।
চেতনা যখন ফিরল, তখন অকল্যান্ড হাসপাতালের
বিছানায়। ভবিষ্যৎ পড়ে গেল ঘোর অনিশ্চয়তায়,
যখন শুনলেন বাঁ পায়ের তিনটা আঙুল কাটা পড়েছে!
বাবা পিটার গাপটিল ছেলেকে আশা দিতে এক
ব্যতিক্রম উপায় বের করলেন। চেষ্টা করলেন
তখনকার নিউজিল্যান্ড দলের ম্যানেজার জেফ
ক্রোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে। কেন? পিটার
বললেন, ‘সেবার নিউজিল্যান্ড সফরে এল
জিম্বাবুয়ে। আমি তাঁকে (ক্রো) অনুরোধ করলাম,
যদি সম্ভব হয়, দলের কোনো খেলোয়াড় যদি
হাসপাতালে এসে মার্টিনকে একটু দেখে
যেত...পরের দিন স্টিফেন ফ্লেমিং এলেন দেখতে।
সত্যি এটা ওর জন্য অনেক বড় পাওয়া ছিল।’ এরপর
ক্রিকেটের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিই বদলে গেল মার্টিন
গাপটিলের। খুঁজে পেলেন জীবনের নতুন আশা।
নয় বছর পরের ঘটনা। ঘরোয়া ক্রিকেটের নানা
সিঁড়ি ভেঙে গাপটিল সুযোগ পেলেন জাতীয় দলে।
২০০৯ সালের জুনে নিজের ঘরের মাঠ অকল্যান্ডে
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেকেই
করলেন অপরাজিত ১২২ রান। আর তাতে ভেঙে গেল
ফ্লেমিংয়ের ১৪ বছরের এক রেকর্ড। কিউইদের পক্ষে
অভিষেকে সর্বোচ্চ রান ছিল ফ্লেমিংয়ের। ১৯৯৪
সালে নেপিয়ারে ভারতের বিপক্ষে ৯০ রান
করেছিল তিনি। যে কিশোরকে উদ্বুদ্ধ করতে একদিন
ফ্লেমিং গিয়েছিলেন হাসপাতালে, সে কিনা
ভেঙে দিল তাঁর রেকর্ড! অবশ্য এমন ‘পরাজয়ে’
যাতনা নেই, বরং মেলে অপার্থিব সুখ! সেদিন
গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন মার্টিনের বাবা
পিটার, মা জ্যান ও তাঁর দাদি। নিশ্চয় একরাশ
সুখানুভূতি ছুঁয়ে গিয়েছিল তাঁদের মনেও।
তখনও কিন্তু অবসর সময়ে বাবাকে সহায়তা করতে
চারপাশে ভারী মেশিনারি সাজানো
প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন গাপটিল। ‘দ্য
নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড’ লিখল, ‘এমন দুর্দান্ত শুরুর
পর তিনি উজ্জ্বল ক্যারিয়ারের আশা করতেই
পারেন...’। দারুণ শুরুর পর প্রত্যাশার প্রতিদান
নেহাত কম দেননি। ২০১৩ সালে মে মাসে
ন্যাটওয়েস্ট সিরিজে সাউদাম্পটনে ইংল্যান্ডের
বিপক্ষে খেলেছিলেন এক বিস্ফোরক ইনিংস। প্রায়
পৌঁছে গিয়েছিলেন ডাবল সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে।
১৮৯ রানে অপরাজিত থেকে নিশ্চয় আক্ষেপ ছিল
মনে—‘ইশ হলো না...! ’
আজ ওয়েলিংটনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেই
আক্ষেপ মেটালেন, ডাবল সেঞ্চুরি করেই ছাড়লেন
‘দুই আঙুলে’র গাপটিল! হ্যাঁ, ‘দুই আঙুল’; শৈশবে
দুর্ঘটনায় পায়ের তিন আঙুল হারানোয় দলে যে তাঁর
ডাক নাম-‘মার্টি টু টয়েজ’! এএফপি ও দ্য
নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড অবলম্বনে।
মার্টিন গাপটিলের ওয়ানডে ক্যারিয়ার:
ওয়ানডে রান গড় সেঞ্চুরি ফিফটি সেরা
১০৬ ৩৬৯০ ৪০.১০ ৭ ২২ ২৩৭ *
এ বিশ্বকাপে গাপটিল
রান প্রতিপক্ষ
২৩৭ * ওয়েস্ট ইন্ডিজ
১০৫ বাংলাদেশ
৫৭ আফগানিস্তান
১১ অস্ট্রেলিয়া
২২ ইংল্যান্ড
১৭ স্কটল্যান্ড
৪৯ শ্রীলঙ্কা

Comments