প্রেসিডেন্ট বলতেই যখন আমাদের মনে ভেসে উঠে একজন ক্ষমতাবান ও
বিত্তবান ব্যক্তিত্বের ছবি, তখন জোসে মুজিকার নাম শুনলেই
ভেসে উঠবে দানশীল ও সহজ সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত এক
রাষ্ট্রনায়কের ছবি। আর উরুগুয়ের সেই বর্তমান প্রেসিডেন্টের নামই
হলো জোসে মুজিকা । যাকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে দরিদ্র
প্রেসিডেন্ট। যিনি যৌবনে ছিলেন একজন গেরিলা ও সত্যিকারের
যোদ্ধা।
এক সময়কার বামপন্থি গেরিলা নেতা মুজিকার নামে কোনো ঋণ নেই,
এমনকি নেই কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্টও। রাজনীতিবিদদের আরাম-
আয়েশ আর চাকচিক্যময় জীবন কাছে টানে না যাকে। তবে বিশ্বের
মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে পরিচিত উরুগুয়ের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তার
মাসিক বেতন প্রায় ১২ হাজার ডলার ।
কিন্তু বেতনের শতকরা ৯০ ভাগই তিনি দান করে দেন রাষ্ট্রীয়
কোষাগারে এবং নিজের জন্য অবশিষ্ট রাখেন মাত্র ৭৭৫ ডলার
(কমবেশি)। এই দানশীলতার কারণেই তাকে বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র
প্রেসিডেন্ট হিসেবে পরিচিতি এনে দিয়েছে। তার স্ত্রীর নাম
লুসিয়াও । নিঃসন্তান এই দম্পতির সবচেয়ে দামি সম্পত্তি হলো ১৯৮৭
সালে কেনা এক হাজার ৯০০ ডলারের একটি গাড়ি।
শুনলে অবাক হবেন যে, উরুগুয়ে প্রশাসনের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর এই
ব্যক্তির বসবাসের খামার বাড়িটি দেখলে যে কেউ
ভূতেরবাড়ি বলে চমকে উঠবে। বিলাসবহুল প্রাসাদে থাকার
বদলে প্রেসিডেন্ট হয়েও তিনি বেছে নিয়েছেন নিতান্তই এক সাধারণ
জীবন। এখনো কর্দমাক্ত পথ পেরিয়েই নিজের খামার
বাড়িতে পৌঁছাতে হয় তাকে। এই অর্ধ-পরিত্যক্ত খামার বাড়ির
মালিকানাও তার নয়, তার স্ত্রীর। এখনো খামারে স্ত্রীর
সঙ্গে নিয়মিত কৃষিকাজ করেন তিনি। খামারে চাষ করছেন হরেক
রকমের ফুল।
ভাঙাচোরা একটি পুরানো কুয়াই বাড়িতে পানি সরবরাহের একমাত্র
ব্যবস্থা। বিশ্বের দরিদ্রতম এই প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তার জন্য
নিয়োজিত আছে মাত্র দুজন পুলিশ আর ম্যানুয়েলা নামের
একটি আদুরের কুকুর। তার দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত এই কুকুরটিরও
একটি পা খোঁড়া।
নিজেকে নিয়ে মুজিকার উপলব্ধি, ‘আমাকে সবাই দরিদ্রতম
প্রেসিডেন্ট বলে। আমার তো মনে হয়, দরিদ্র তারাই
যারা সারাটা জীবন কেবল ভোগ্যপণ্য কেনার অর্থ জোগাড়
করতে দাসের মতো খেটে যাচ্ছে।’
নিজেকে তিনি পরিচয় দেন একজন কৃষক হিসেবে। ২০০৯ সালে দেশটির
জনগণ তাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনীত করেন। মুজিকা তার ৭৮
বছরের জীবনে জেল খেটেছেন ১৪ বছর আর গুলি খেয়েছেন মোট ছয়বার।
Comments
Post a Comment