ধনেপাতা, এক কথায় বিপদজনক!

নিত্যদিনের বিভিন্ন খাবারে ধনেপাতা ব্যবহার করে থাকেন খাবারের গন্ধ এবং স্বাদে একটা পরিবর্তন আনার জন্য। ধনেপাতার বৈজ্ঞানিক নাম হল কোরিয়ানড্রাম স্যাটিভাম। কিন্তু কখনও
কি কল্পনা করেছেন যে এই সুস্বাদু খাবারটির
কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে?
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি কথা হল, এই
সুপরিচিত সবুজ সবজিটির অনেক
ঔষধি গুণাগুণের পাশাপাশি অনেক
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও বিদ্যমান। যা নিয়মিত
খেলে আমাদের শরীর দিনদিন অসুস্থ
হয়ে যেতে পারে।
লিভারের ক্ষতিসাধন
অতিরিক্ত ধনেপাতা খেলে এটি লিভারের
কার্যক্ষমতাকে খারাপভাবে প্রভাবিত
করে থাকে। এতে থাকা এক ধরনের উদ্ভিজ
তেল শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-
প্রত্যঙ্গকে আক্রান্ত করে ফেলে।
এছাড়া এটাতে এক ধরনের
শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট
রয়েছে যেটা সাধারণত লিভারের বিভিন্ন
সমস্যা দূর করে কিন্তু দেহের মাঝে এর
অতিরিক্ত মাত্রার উপস্থিতি লিভারের
ক্ষতিসাধন করে।
নিম্ন রক্তচাপ
অতিরিক্ত ধনেপাতা খাওয়ার ফলে দেহের
হৃৎপিন্ডের স্বাস্থ্য নষ্ট করে ফেলে, যার
ফলে নিম্ন রক্তচাপ সৃষ্টি করে।
বিশেষজ্ঞরা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এই
ধনেপাতা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
তাই এটি অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে নিম্ন
রক্তচাপের উদ্ভব ঘটতে পারে।
এছাড়া এটি হালকা মাথাব্যথারও উদ্রেক
করতে পারে।
পেট খারাপ
স্বাভাবিকভাবে ধনেপাতা গ্যাস্ট্রোইনটেস্ট
বিষয়ক সমস্যা দূর করে থাকে কিন্তু
বেশি পরিমাণে ধনেপাতা সেবন
পাকস্থলীতে হজমক্রিয়ায়
সমস্যা তৈরি করে থাকে। একটি গবেষণায়
দেখা গেছে যে এক সপ্তাহে ২০০ এমএল
ধনেপাতা আহারে গ্যাসের ব্যথা ওঠা,
পেটে ব্যথা, পেট ফুলে ওঠা,
বমি হওয়া হওয়ারও সম্ভাবনা দেখা যায়।
ডায়রিয়া
ধনেপাতা অল্প খেলে পেটের সমস্যা দূর হয়
কিন্তু
এটি বেশি পরিমাণে খেলে ডায়রিয়া হওয়ার
সম্ভাবনা থেকে যায়। এছাড়া এর
ফলে ডিহাইড্রেশন হতে থাকে।
ফলে ডায়রিয়ার সমস্যাটি হতেই থাকে। তাই
এই ধরনের সমস্যা এড়াতে প্রতিদিনের
খাবারে ধনেপাতা কম পরিমাণে ব্যবহার
করুন।
নিঃশ্বাসের সমস্যা
আপনি যদি শ্বাসকষ্টের রোগী হয়ে থাকেন
তাহলে এই ধনেপাতা আহার থেকে বিরত
থাকুন। কেননা এটি আপনার শ্বাস প্রশ্বাসের
সমস্যা করে থাকে যার
ফলে ফুসফুসে অ্যাজমার সমস্যা হতে পারে।
এই ধনেপাতা খেলে মাঝে মাঝে ছোট ছোট
নিশ্বাস নিতেও সমস্যা তৈরি হয়।
বুকে ব্যথা
অতিরিক্ত ধনেপাতা আহারে বুকে ব্যথার মত
জটিল সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
এটা শুধুমাত্র অস্বস্তিকর ব্যথাই
সৃষ্টি করে না তা দীর্ঘস্থায়ীও হয়ে থাকে।
এজন্য এই সমস্যা থেকে রেহাই
পেতে দৈনন্দিন আহারে কম করে এই
ধনেপাতা খেতে পারেন।
ত্বকের সংবেদনশীলতা
সবুজ ধনেপাতাতে মোটামুটিভাবে কিছু
ঔষধি অ্যাসিডিক উপাদান
থাকে যেটি ত্বককে সূর্যরশ্মি থেকে বাঁচিয়ে
করে থাকে। কিন্তু অতিরিক্ত সেবনে সূর্যের
রশ্মি একেবারেই ত্বকের ভেতরে প্রবেশ
করতে পারে না ফলে ত্বক ভিটামিন
কে থেকে বঞ্চিত হয়।
এছাড়া ধনেপাতা ত্বকের ক্যান্সার প্রবণতাও
তৈরি করে থাকে।
অ্যালার্জীর সমস্যা
ধনেপাতার প্রোটিন
উপাদানটি শরীরে আইজিই নামক
অ্যান্টিবডি তৈরি করে যা শরীরের
বিভিন্ন রাসায়নিক
উপাদানকে সমানভাবে বহন করে থাকে।
কিন্তু এর অতিরিক্ত মাত্রা উপাদানগুলোর
ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলে। ফলে অ্যালার্জীর
তৈরি হয়। এই অ্যালার্জীর
ফলে দেহে চুলকানি, ফুলে যাওয়া,
জ্বালাপোড়া করা, র্যা শ ওঠা এই ধরনের
নানা সমস্যা হয়ে থাকে।
প্রদাহ
অতিরিক্ত ধনেপাতা সেবনের
আরেকটি বিশেষ পার্শ্ব প্রতক্রিয়া হল
মুখে প্রদাহ হওয়া। এই ঔষধিটির বিভিন্ন
এসিডিক উপাদান যেটি আমাদের
ত্বককে সংবেদনশীল
করে থাকে পাশাপাশি এটি মুখে প্রদাহেরও
সৃষ্টি করে। বিশেষ করে এর ফলে ঠোঁট,
মাড়ি এবং গলা ব্যথা হয়ে থাকে। এর
ফলে সারা মুখ লাল হয়েও যায়।
ভ্রূণের ক্ষতি
গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত
ধনেপাতা খাওয়া ভ্রূণের বা বাচ্চার শরীরের
জন্য বেশ ক্ষতিকারক।
ধনেপাতাতে থাকা কিছু উপাদান মহিলাদের
প্রজনন গ্রন্থির কার্যক্ষমতাকে নষ্ট
করে ফেলে যার ফলে মহিলাদের বাচ্চা ধারণ
ক্ষমতা লোপ পায় এবং বাচ্চা ধারণ করলেও
গর্ভকালীন ভ্রূণের মারাত্মক
ক্ষতি করে থাকে।

Comments