১২ গ্রামের মানুষের ‘মরণফাঁদ’

স্বাধীন:- পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার
সাপুড়িয়া খালের ওপর নির্মিত সেতুর অধিকাংশ
স্লিপার ভেঙে গেছে। চলাচলের অনুপযোগী এই
সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই মিঠাগঞ্জ,
বালিয়াতলী ও ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের ১২ গ্রামের
অন্তত ৩৫ হাজার বাসিন্দা যাতায়াত করছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের
জয়বাংলা বাজারসংলগ্ন সাপুড়িয়া খালের
সেতুটি লোহার তৈরি। এর ওপরের সিমেন্টের
স্লিপারগুলোর অধিকাংশ ভেঙে গেছে। লোহার
বিমে মরিচা ধরে গেছে। লোহার
সংযোগগুলো বেঁকে কাত হয়ে গেছে। বিশেষ
করে সেতুতে ওঠা ও নামার জায়গাগুলো খুবই
ঝুঁকিপূর্ণ। স্থানীয় লোকজন লোহার বিমের ওপর
কাঠ দিয়ে বর্তমানে এই সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল
করছে।
পূর্ব পাড়ের মিঠাগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা মঞ্জুরুল
হক বলেন, সেতুটি এতই জরাজীর্ণ যে এর ওপর
দিয়ে পারাপার হওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
তাড়াতাড়ি সেতুর সংস্কারকাজ
করা না হলে আর কিছুদিনের মধ্যে গ্রামীণ
যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)
১৯৯৯ সালে সেতুটি নির্মাণ করে। তার
পরে কোনো সংস্কারকাজ হয়নি। স্থানীয়
কয়েকজন বলেন, সেতুটি দুই বছর ধরে এ রকম
জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। স্থানীয়
ব্যক্তিরা নিজেদের
উদ্যোগে ভেঙে যাওয়া স্থানে গাছের
ঠেকা দিয়ে কোনো রকমে চলাচল করছে।
সেতুসংলগ্ন বাজারটির উভয় পাড়ের আলীগঞ্জ,
তেগাছিয়া, আরামগঞ্জ, ফুলবুনিয়া, বৈদ্যপাড়া,
পশ্চিম মধুখালী, মিঠাগঞ্জ, পূর্ব মধুখালী,
গোলবুনিয়াসহ অন্তত ১২টি গ্রামের মানুষ সেতু
পার হতে গিয়ে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগে পড়ছে।
সেতুটির পশ্চিম-দক্ষিণ পাশে আরামগঞ্জ দাখিল
মাদ্রাসা এবং উত্তর-পূর্ব পাশে মিঠাগঞ্জ
কেরাতুল কোরআন মাদ্রাসা ও মিঠাগঞ্জ
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। প্রতিদিন
৫০০-৬০০ শিক্ষার্থী এই সেতু ব্যবহার করে।
সেতুর অবস্থা নড়বড়ে হওয়ায় ভাড়ায় চালিত
মোটরসাইকেল, রিকশা, ভ্যান ও টমটম চলাচল বন্ধ
রয়েছে। কয়েক দিন
আগে একটি যাত্রীবাহী মোটরসাইকেল সেতুর
স্লিপার ভেঙে খালে পড়ে যায়। দুর্ঘটনায়
মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের মিঠাগঞ্জ গ্রামের
মোটরসাইকেলচালক আবদুল্লাহ ও সাইফুল গুরুতর
আহত হন।
সেতুর পশ্চিম পাড়ের আলীগঞ্জ গ্রামের
বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম ব্যাপারী বলেন,
গ্রামের লোকজন অসুস্থ হলে তাদের দ্রুত
হাসপাতালে নিতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।
ছোটরাও ঝুঁকি নিয়ে সেতু পার হয়ে বিদ্যালয় ও
মাদ্রাসায় যাওয়া-আসা করে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের
উপজেলা প্রকৌশলী মো. আবদুল মান্নান বলেন,
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ
ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সেতুসংলগ্ন জয়বাংলা বাজার কমিটির
সভাপতি আবদুল কাঁদের মৃধা জানান, গত বছর
জয়বাংলা বাজার উদ্বোধনের সময় সেতুটির
খারাপ অবস্থা দেখে স্থানীয় সাংসদ মো.
মাহাবুবুর রহমান সেতুটি সংস্কার করে দেওয়ার
আশ্বাস দেন। তা ছাড়া গ্রামবাসীও স্থানীয়
সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের
উপজেলা কার্যালয়ে গিয়ে সেতুটি সংস্কারের
আবেদন জানিয়েছে। তাঁরা দ্রুত কাজ শুরু করার
কথা বললেও এখন পর্যন্ত তা হয়নি।

Comments